[প্রথমপাতা]

 

 

 

একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ: প্রবাসী নাহিদের স্বদেশপ্রেম

 

কাজী ইনসান

 

বইটি পাঠিয়েছে আমার অতিপ্রিয় একজন নাহিদ। জাপান প্রবাসী নাহিদ দীর্ঘদিন ধরে চিবা কেনে থাকে । রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে কমিউনিটির পরিচিত মুখ। আমার মোবইলের কল লিস্টে তিনজন নাহিদের ফোন নাম্বার আছে, ওসাকার নাহিদ, ছাত্র নাহিদ আর এই নাহিদের পরিচয় ...শহীদ মুক্তিযোদ্ধার ভাই। নাহিদ। অর্থাৎ নাহিদ কে যখন আমি কল করি বা নাহিদ যখন আমাকে কল করে আমি সেই মুহূর্তে একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার ভাইয়ের দেখা পাই। কথা বলি, নিজের অজ্ঞাতেই একটু সোজা হয়ে বসি, একটু মর্যাদা দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করি। আমার অদেখা অজানা একজন অকালেই ঝরে যাওয়া স্বাধীনতার যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার অবয়ব মোবইলের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে।

নাহিদ ভীষন বিনয়ী সেই সাথে আধুনিক মন মানসিকতার। প্রায়শইঃ স্বাধীনতা, স্বদেশ নিয়ে আলোচনা করে। মাঝে মধ্যে আমাদের সম্পাদিত পরবাস পত্রিকার জন্য লেখা পাঠায়, সেগুলো স্বদেশ কেন্দ্রিক ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। কখনো প্রকাশিত লেখা নিয়ে তার নিজের মতামত জানায়। টোকিও শহীদমিনার প্রতিষ্ঠিত হলে সে তার এক জাপানি বন্ধুকে নিয়ে যায়, সেই বন্ধু ভাষা শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়, আমরা সেই ছবিটি মাগাজিনে প্রকাশ করি। তার বড়ভাই যিনি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন তার কথাও বলে।

নাহিদ সম্বন্ধে এতকথা লিখছি এ জন্যে যে আমাদের এই নাহিদ একটি কাজ করে অভাবনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এবং সেই কাজে তার দেশপ্রেম যে কতটা তা অনুধাবন করা যায়। আমরা প্রবাসীরা অনেকেই নিজেদের লেখা বই প্রকাশ করি, প্রবাস জীবনের নানা প্রতিকূলতায় নিজের লেখা বই প্রকাশ করে একটু হলেও ভালোলাগায় আপ্লুত হই। নাহিদ কিন্তু নিজের লেখা কোনো বই প্রকাশ করে নি, সে প্রকাশ করেছে স্বাধীনতা যুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া তার আপন ভাই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলামকে নিয়ে ...একজন শহীদ কিশোর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ ...বইটি। বইটি লিখেছেন নাহিদের আরেক ভাই নুরুল ইসলাম, বইটি উত্সর্গিত হয়েছে ..আপামর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা যাদের রক্তঋণে অর্জিত বাংলাদেশ।

স্বল্পায়ু জীবনের ১৫ বছরের এই কিশোর মুক্তিযোদ্ধা ও তার সতীর্থদের যুদ্ধে যাওয়া -বুকের তাজা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের বীরত্বগাথার কাহিনীটি বই আকারে প্রকাশ করে নাহিদ একটি অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে -দেশের প্রতি তার দায়বদ্ধতার ঋণ সামান্য হলেও শোধ করেছে বলে আমি মনে করি। নাহিদ তোমাকে অভিনন্দন।

বইটির প্রচ্ছদে যে কিশোরে মুক্তিযোদ্ধা পোট্রেট (প্রচ্ছদ শিল্পীর নাম কেন উল্লেখ নেই বুঝলাম না)সেটি দেখে আমি লজ্জায় নিজের কাছে মুখ লুকাতে পারছিনা। আমিও ওই বয়সের কিন্তু ওই সময় আমি প্রচ্ছদের ওই মুক্তিযোদ্ধা মত বীরদর্পে যুদ্ধে যাইনি -যেতে পারিনি অথচ ওই শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সকল সুখ দিব্যি ভোগ করে চলেছি।

আমি জানিনা নাহিদের কল লিস্ট এ আমার নাম এর পাশে পরিচিতি হিসেবে কী লেখা আছে? অমুক্তিযোদ্ধা নাকি একাত্তর এ যুদ্ধে না যাওয়া একজন ভিরু কাপুরুষ ....কোনটা?

কাজী ইনসান
আগস্ট ১৫, ২০১১
kaziensan@gmail.com


 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

>>লেখকের অন্যান্য লেখা