|
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানি কামিকাজে পাইলটঃ বিদায় দেয়ার দায়িত্বে ছিলো
কিশোরী মেয়েরা
কমিউনিটি রিপোর্ট ।।
অগাষ্ট ৪, ২০১৫ ।।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ লগ্নে জাপানের তরুণ পাইলটরা আত্মঘাতি মিশনে আকাশে
যখন উড়ে যাচ্ছিলেন তখন রুমাল ও ফেকাশে লাল রঙা চেরি ফুল নেড়ে তাদের চির
বিদায় জানাতেন স্কুল পড়ুয়া মেয়েরা।
"এ কথা স্মরণ করে এখনো আমাকে কষ্ট দেয়" চিনো কুওয়াশিরো (৮৬) বলতে গিয়ে থেমে
যান। "আমরা হাত নাড়তাম যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদেরকে আকাশে মিলিয়ে যেতে দেখতাম।
কেন আমাদেরকে এই কষ্ট এখনো বহন করতে হবে?"
তিনি এবং অন্য মেয়েরা নাদেশিকো নামে পরিচিত ছিলেন, ক্ষণস্থায়ী ফেকাশে লাল
ফুলকে জাপানে নারীত্ব হিসেবে দেখা হতো। তাদেরকে চিরান'র সেনা ঘাঁটিতে
পাইলটদের দেখভালের নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো। তাদের কাজ ছিলো পরিস্কার করা,
কাপরো-চোপড় ধোয়া, বোতাম সেলাই করা এবং তাদেরকে শেষবারের মতো বিদায় জানানো।
প্রায় ১০০ মতো মেয়ে ১৯৪৫ সালের বসন্তে প্রায় এক মাস এ কাজ করে, কিন্তু
বিদায় জানানোর বিষয়টিই তাদের হৃদয় ও মনের মধ্যে সবচেয়ে বেদনার হয়ে আছে।
বর্তমানে এক ডজনের মতো নাদেশিকো নারী বেঁচে রয়েছেন।
চিরান ছিলো ৪৩৯ জন পাইলটের আত্মঘাতি মিশনে অংশ নেয়ার জন্যে উড্ডয়ন স্থান,
পাইলটদের অনেকেই ছিলেন টিনএজার। এর চার মাস পর জাপান আত্মসমার্পণ করে।
কুওয়াশিরো সেই স্মৃতি স্মরণ করতে গিয়ে অশ্রুসজল হয়ে পড়েন, সেই সবুজ চা
বাগান এবং কুমড়ো ক্ষেত যেখানে এক সময় তিনি দাঁড়িয়ে থাকতেন। বিমান গুলো
তাদের ডানা তিনবার হেলিয়ে বিদায় সূচক সেল্যুট জানাতো -তাদের এক ডানায় থাকতো
বোমা অপর ডানায় ঝুলতো জ্বালানি ট্যাঙ্ক।
আজকে চিরানে যুদ্ধের ভয়াবহতার কথাই ফুটে ওঠে। সেখানে প্রদর্শিত হয়ে ৭০ বছর
আগেকার সেই যন্ত্রণাদায়ক শিক্ষা, কত মানুষের প্রাণ সেখানে ঝড়ে গেছে।
জাপানের বাইরে প্রথমবারের মতো মার্কিন রণতরী ইউএসএস মিসৌরি'তে কামিকাজে
পাইলটদের ছবি, চিঠি, কবিতা এখন প্রদর্শিত হচ্ছে। হাওয়াই'র পার্ল হার্বারে
জাহাজটি নোঙর করা রয়েছে। সেখানকার আইটেম গুলো চিরান শান্তি যাদুঘরের, যা
আত্মঘাতি মিশনে অংশ নেয়া পাইলটদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পাইলটদের কামিকাজে নামটি বিশেষ ভাবে ব্যবহৃত হয়- নৌ
বাহিনীর পাইলটদের ক্ষেত্রে। যে সব পাইলটরা মৃত্যুর জন্যে উড়তে অস্বীকৃতি
জানাতো তাদেরকে জেলে বন্দী করা হতো।
"মাগো, আমার মুখে অনেক হাসি, কারণ আমি আমার শেষ এবং প্রথমবারের মতো
মাতাপিতার প্রতি সন্তানের ভালোবাসার কাজ করতে যাচ্ছি। তুমি কেঁদো না। দয়া
করে মনে রেখো আমি ভালো কাজ করেছি" ১৯ বছরের ফুজিও ওয়াকামাৎসু লিখে যান।
চিঠিটি এখন প্রদর্শিত হচ্ছে।
রণতরী মিসৌরি'র প্রেসিডেন্ট ও চিফ এক্সিকিউটিভ মিশেল কার বলেছেন, গল্প
গুলোর প্রতি মানুষ কুন্ঠিত হওয়ার বদলে দর্শণার্থীরা চিরান প্রদর্শনীতে এসে
মুগ্ধ হচ্ছেন। নভেম্বরের ১১ তারিখ থেকে প্রদর্শনী চলছে।
"এখানে তুলে ধরছে বিশ্বের সকল মানুষ পরিবার, দেশ এবং তার কর্তব্যের প্রতি
একই ধরনের ভালোবাসার অনুভুতি বহন করে" তিনি বলেন।
চিরান যাদুঘরের একটি কোনা নাদেশিকো'দের উদ্দেশ্যে রাখা রয়েছে, সেখানে রয়েছে
১৯৮০'র দশকে ধারন করা একজন নাদেশিকো'র সাক্ষাৎকারের ভিডিও।
রেইকো আকাবানে ২০০৬ সালে মারা যান। ভিডিওতে তিনি বলেন, জনৈক পাইলট বিদায়
নেয়ার আগে আমি তার মা-বাবা'র কাছে পাঠানো একটি চিঠি পোস্ট করে বাকী পয়সা
ফেরৎ দিতে গিয়েছিলাম। কয়েন গুলো নেয়ার বদলে সে আমাকে তার মানিব্যাগটাই তুলে
দিয়ে বললো আমার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রেখে দিও।
অপর এক পাইলট নোবুও তানিগুচি কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলেন, আফসোস করে বলছিলেন,
তোমাকে দেয়ার মতো কোনো পয়সা আমার কাছে নেই। শেষ পর্যন্ত তিনি দু'টো মসৃণ
পাথর তুলে নিয়ে আমার হাতে দিলেন।
"আমার পায়ের নীচের শেষ দু'টি পাথর" আকাবানে স্মৃতি রোমন্থন করে বললেন।
সেই মানিব্যাগ আর পাথর দু'টি চিরানের একটি ছোট্ট ঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে -এ
ধরনের ঘরকে বলা হয় জোনাক পোকার ঘর। ঘরটি তোমে তোরিহামা'র রেস্টুরেন্টের
রেপ্লিকা। তোরিহামা'কে অনেক কামিকাজে পাইলট মায়ের মতোই দেখতেন।
জাপানের কামিকাজে পাইলটদের ইমেজটি হলো জোনাক পোকার মতো, ভালোবাসার জন্যেই
যেন মরে এবং খুব ছোট্ট একটি জীবন।
তোরিহামা একটি ভিডিওতে বলেন "তারা সরাসরি স্বর্গে চলে গেছে। ওরা কতটা ভদ্র
ছিলো, আমি তাদের দেখতাম সন্তানের মতো করে"।
যাদুঘরের বক্তব্য মতে মেয়েরা পাইলটদের বালিশের খোল ধুয়ে দিতো, প্রায়ই
তাদেরকে দেখা যেতো ঝরঝর করে কাঁদছে।
কিন্তু যখন পাইলটরা নিশ্চিত মৃত্যুর পথে উড়ে যেতো তারা ছিলো সাহসী। কুয়াশিরো
মনে করেন তারা যেন জীবন্ত স্বর্গের দূত।
"তাদের চোখেমুখে ছিলো সাহস" তিনি বলেন "তাদেরকে কখনোই মন খারাপ দেখা যেতো
না"। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।
WARNING:
Any unauthorized use
or reproduction of
'Community' content is
strictly prohibited
and constitutes
copyright infringement
liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |
|