[প্রথমপাতা] |
জাপানে রেডিমেড
গার্মেন্টসের শিপমেন্টের গতি মন্থর হয়ে যাচ্ছে
কাজী আজিজুল ইসলাম
গত বছর জাপানে বাংলাদেশের তৈরি বস্ত্র রপ্তানীর
পরিমান ছিলো ২১০ মিলিয়ন ডলার। এক বছরে রপ্তানী তা বেড়েছে ৫৩ শতাংশ।
কিন্তু জাপানি কর্তৃপক্ষের রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে শিপমেন্টের গতি আগের
বছরের চাইতে হ্রাস পেয়েছে।
জাপানের অর্থমন্ত্রনালয়ের এক সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা যায় ২০১০ সালে
বাংলাদেশ থেকে ১৭.৩ বিলিয়ন ইয়েনের (২১০ মিলিয়ন ডলার) তৈরি পোষাক ও
আনুষাঙ্গিক আমদানি করে।
২০০৯ সালে আমদানির পরিমান ছিলো ১১.৩ বিলিয়ন ইয়েন, ২০০৮ সালে ছিলো ৪.৭
বিলিয়ন ইয়েন এবং ২০০৭ সালে ছিলো ৩.৫ বিলিয়ন ইয়েন।
পোষাক শিল্পের সাথে জড়িতরা বলছেন জাপানে ক্রেতাদের চাহিদা রয়েছে কিন্তু
সরবরাহজনিত সমস্যা সেখানে বাজার সম্প্রসারনের জন্য প্রতিবন্ধকতা সরূপ।
"জাপানের আমদানিকারকরা এখনো বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোষাক নিতে আগ্রহী কিন্তু
সরবরাহের অংশটি এখানে শিল্প বিকাশের অন্তরায় হয়ে রয়েছে" জানালেন জাপান
বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির একজন কর্মকর্তা।
তিনি জানালেন, বাংলাদেশী প্রস্তুতকারকরা জাপানি ক্রেতাদের চাহিদার ব্যাপারে
তেমন সচেতন নয়।
"জাপানের আমদানিকারকরা মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে খুবই সংবেদনশীল, তারা আগে
সরবরাহকারীর উপর আস্থা অর্জন করে তারপর ব্যবসা সম্প্রসারন করতে চায়" তিনি
বলেন।
রপ্তানির সাথে জড়িত একজন মালিক জানিয়েছেন সম্প্রতি ইইউ থেকে অর্ডারের
পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বাংলাদেশী প্রস্তুতকারকরা অপেক্ষাকৃত নতুন জাপানি
বাজারে পোষাক রপ্তানির ক্ষেত্রে ততটা আগ্রহী নয়।
"জাপানি ক্রেতাদের কাছ থেকে সল্প ও মাঝারি পরিমানের অর্ডার আসে বটে কিন্তু
বাংলাদেশের প্রস্তুতকারকরা মার্কিন ও ইইউর বিশাল বাজারের জন্য পোষাক
প্রস্তুত করতে অভ্যাস্ত, তাই তারা এইসব ছোটখাট অর্ডারের প্রতি তেমন আগ্রহ
প্রকাশ করেনা" তিনি বলেন।
গত বছরের হিসেব অনুযায়ী আমদানিকৃত পোষাকের ২৮.৫ বিলিয়ন ডলারের বিশাল জাপানি
বাজারে বাংলাদেশের শেয়ার মাত্র ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার -যা সত্যিকার
অর্থেই বেশ ক্ষুদ্র।
জাপানে গত বছর চীন ২৬.৭ বিলিয়ন ডলার এবং ভিয়েতনাম ১.২৮ বিলিয়ন ডলারের তৈরি
পোষাক রপ্তানি করেছে।
২০১০ এ জাপানে তৈরি পোষাক শিপমেন্টের দিক থেকে বাংলাদেশ থাইল্যান্ড ও
মিয়ানমারকে পিছনে ফেলে ৬ষ্ঠ স্থানে ছিলো। মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের
রপ্তানির পরিমান ছিলো ২১০ থেকে ৩২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে।
অর্থনৈতিক মন্দার কারনে জাপানি আমদানিকারকরা বাংলাদেশকে চীনের চাইতেও সুলভ
উৎস হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করলে ২০০৮ সাল থেকে জাপানে বাংলাদেশের তৈরি
পোষাক রপ্তানির পরিমান উল্লেখযোগ্য পরিমানে বৃদ্ধি পায়।
আন্তর্জাতিক বানিজ্য বিশ্লেষক গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন জাপানের কৌশল হলো "চীন
যোগ এক", সেখানকার সরকারী এবং বেসরকারী খাতগুলো এভাবেই ডিজাইন করা হয়েছে যা
বাংলাদেশের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
মোয়াজ্জেম বললেন বাংলাদেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলির উচিত এই নতুন সুযোগ হাত
ছাড়া না করা। তিনি আরো বলেন, বর্ধনশীল এই নতুন বাজার বাংলাদেশের রপ্তানি
খাতে সুদূর প্রসারী ভূমিকা রাখবে।
তিনি জানান, বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর উচিত রপ্তানিকারকদেরকে এ ব্যাপারে
পর্যাপ্ত তথ্য ও নয়া বাজার সম্প্রসারনে প্রয়োজনীয় সমর্থন দেয়া।
স্থানীয় নির্মাতারা নতুন ক্রেতাদের বাজার উপোযোগী সক্ষমতা অর্জন করার সাথে
সাথে লিঙ্কেজ প্রোগ্রামের মাধ্যমে যৌথ উদ্যোগ নিতে হবে বলে জানালেন পোষাক
শিল্পের সাথে জড়িত এই বিশেষজ্ঞ।
জাপানে সম্ভাব্য বাজার সম্প্রসারণে, বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের উচিত জাপানি
আমদানিকারকদের উপযোগীকরে রপ্তানি কৌশল নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়ন করা।
জাপানি ক্রেতাদেরকে বিশেষ ভাবে স্বাগত জানানো উচিত কারন মিয়ানমার,
ইন্দোনেশিয়া এবং ভারতের মত বিকল্প বাজার ধারের কাছেই রয়েছে যারা এইসব জাপানি
ক্রেতাদেরকে বাংলাদেশ থেকে তাদের দেশে নিয়ে যেতে প্রলুব্ধ করতে পারে -মোয়াজ্জেম
বললেন।
* ইংরেজি থেকে অনূদিত।
[প্রথমপাতা] |
|