[প্রথমপাতা]

 

 

 

বাংলাদেশের সংগে কাজ করতে চান জাপানি তরুণী মারিকো তাকাহাশি
 

 

কমিউনিটি রিপোর্ট ।। মে ৬, ২০১১ ।।
রাহমান মনি

নাম তার তাকাহাসি মারিকো, এক স্মার্ট জাপানি তরুণী। বয়স সবে বিশের কোঠা পার করেছেন। কিন্তু বয়সের তুলনায় বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা অর্জন ঝুলিপূর্ণ। রয়েছে বিশ্ব সম্পর্কে ধারণা। আর থাকবে না-ই বা কেন? এই বয়সেই তিনি ভ্রমন করেছেন বিশ্ব।

নারা কেন এর নারা শহরে জন্ম নেয়া তাকাহাসি মারিকো তার সমসাময়িক অন্য দশজনের মতই সাধারণ স্কুলে তার মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন শেষ করেন। কিন্তু অন্য দশজনের সাথে পার্থক্যটা হলো অত্যান্ত ধার্মিক এবং কঠোর পারিবারিক অনুশাসনে বেড়ে ওঠা মাকিকো মাত্র ১৭ বছর বয়সে একা একটি গ্রুপের ডাকে ভারত সফরে বেরিয়ে পড়েন। যে কিশোরী জাপানকেই ঠিকমত জানতে পারেনি সে কিনা মাত্র ১৭ বছর বয়সে ভিন্ন সাংস্কৃতির, ভিন্ন পরিবেশের একটি দেশে বেড়িয়ে এসেছেন, অজানাকে জানার জন্য অচেনাকে চেনার জন্য পদে পদে বাধা সত্বেও সম্পূর্ণ মানসিক দৃঢ়তা থেকে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকেও প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছিলেন সেই সেমিনারে। সেমিনারের বিষয়বস্তু ছিলো 'নারী এবং পরিবেশগত সমস্যা।'

এরপর তিনি স্কলারশীপ নিয়ে চলে যান আমেরিকা। পেনসিলভেনিয়ার পিটসবার্গের চ্যাথান বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্লোবাল পলিসি নিয়ে পড়াশোনার পর্ব শেষ করেন। সেখানে প্রথম বছর নিজের অর্থে পড়াশোনার খরচ বহন করতে হয়। ২০০৬ সালে আমেরিকাতে পড়াশোনা শেষ করে জাপানে প্রত্যাবর্তন করেন।

২০০৭ সআলে একটি ল'ফার্মে কাজে যোগদান করেন। যাদের কাজ ছিলো বিশ্ববাসীকে আইনী সহায়তা প্রদান। এই সময় মারিকো ওসাকা থেকে বিশ্ব পরিক্রমার উপর তিন বছরের একটি কোর্স শেষ করেন। ল'ফার্মে কাজ করার সময় তিনি বিভিন্ন অনুন্নত দেশগুলোর পথশিশুদের নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা করেন। ভারত সফরের সময় এক বাংলাদেশির সাথে তার পরিচয় ঘটে। সেই সময় তিনি প্রথম বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের সাংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারেন। জানতে পারেন বাংলাদেশের তৈরি বিভিন্ন পণ্য (পাটজাত, চামড়া, কুটির শিল্প, গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি ইত্যাদি) সম্পর্কে। ভারতের বাজারে তিনি যা দেখেছেন জাপানে তা বাজারজাত করার কথা ভাবতে শুরু করেছিলেন সেই সময় থেকেই। বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য তাকে বেশি আকৃষ্ট করতে থাকে। সে সময় এ ধরনের পণ্যের প্রায় ৯০% আসতো চীন থেকে। চীনের একচেটিয়া বাজার দেখে ভারত, বাংলাদেশ ইত্যাদি অনুন্নত দেশগুলো থেকে পণ্য আমদানিতে উত্সাহিত হন মারিকো। কিন্তু বাঁধসাধে পুঁজি আর অভিজ্ঞতা। যোগাযোগ করতে থাকেন বিভিন্ন মাধ্যমে।

ইন্টারনেটে সার্চ করে বাংলাদেশ দূতাবাসের সাবেক কমার্শিয়াল কাউন্সেলর আবুল মনসুর মোঃ ফয়েজুল্লাহকে নিজের ইচ্ছা ব্যক্ত করে একটি ইমেইল পাঠান। মনসুর সাহেব তাকে দূতাবাসে ডেকে পাঠান এবং তার বক্তব্য শোনেন। ঐ সময় আব্দুল লতিফ (এম.পি)র নেতৃত্বে চট্টগ্রাম চেম্বার্সের একটি প্রতিনিধি দল জাপান সফর করলে মারিকো তাকাহাশি তাদের সাথে দেখা করেন। ভিজিটিং কার্ড বিনিময় করেন। দেশে প্রত্যাবর্তন করলে সবাইকে ইমেইল পাঠান। কিন্তু কারো কাছ থেকে কোন সহযোগিতা পাননি। কিন্তু তাতেও কোন ক্ষোভ নেই তার। দমে যাননি তিনি।

মারিকো মনে করেন তার প্রতিষ্ঠিত wa corporation (www.wacorp.com) এর প্রতিষ্ঠা পেতে সময় এবং শ্রম দু'টোই ব্যায় করতে হবে। তিনি জাপান প্রবাসী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এম ডি এস ইসলাম নান্নুর সাথে যোগাযোগ করেন পূর্বসূত্র ধরে। জনাব নান্নু তাকাহাশিকে সহযোগিতার হাত বাড়ান। বিভিন্ন ব্যবসায়িক কাজে তাকে সহযোগিতা করেন। এ ধরণের পণ্য ছাড়াও বাংলাদেশে বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানি এবং অন্যান্য কাজে কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করে জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চান। এমনকি প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাংস্কৃতি অংগনেও তিনি অবদান রাখতে চান। তিনি ইংরেজি ভাষায় অনর্গল কথা বলা সহ জাপানি থেকে ইংরেজি বা ইংরেজি থেকে জাপানিতে দোভাষীর কাজে বেশ পটু।গত ৩রা এপ্রিল বাংলাদেশ কমিউনিটি আয়োজিত চ্যারিটি কনসার্টে ভাষান্তর করে তার দক্ষতার সাক্ষর রাখেন। তিনি ইংরেজিতে উপস্থাপনা সহ রাষ্ট্রদূতের লিখিত বক্তব্য তাত্ক্ষনিক ভাবে জাপানিতে ভাষান্তরে করেন।

কমিউনিটির সাথে একান্ত সাক্ষাত্কারে তাকাহাসি বলেন, তিনি এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলোর জন্য কাজ করতে চান। পথশিশুদের নিয়ে কাজ করার আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন মারিকো তাকাহাশি। ভবিষ্যতে তার কর্মপরিধি বাড়িয়ে আরো লোকের কর্মসংস্থান করতে চান তিনি।

বর্তমানে তাকাহাশি আফ্রিকার তিনটি দেশ কেনিয়া, উগান্ডা এবং রুয়ান্ডা সফর করছেন। আগামী জুনে তিনি জাপানে ফিরে আসবেন বলে জানান।

 

[প্রথমপাতা]