|   প্রথমপাতা  |  প্রকাশের তারিখঃ Thursday, April 17, 2025 17:41 |

 

শিল্পী কাররুল হাসান লিপুর তুলিতে জাপানে প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা

 

 

কমিউনিটি রিপোর্ট ।।

সদ্য সমাপ্ত বৈশাখী মেলায় এবার একটি নতুন সংযোজন ছিলো "মঙ্গল শোভাযাত্রা"। বাংলাদেশে প্রতিকূল পরিবেশে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত না হলেও এ বছরই প্রথমবারের মত জাপানে অনুষ্ঠিত মঙ্গল শোভাযাত্রা। চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান লিপুর পরিকল্পনায় আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রাটি প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও মেলার বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে।

প্রবাসী বাংলাদেশীরা এই মঙ্গল শোভাযাত্রা দেখে উচ্ছাসিত হয়ে পড়েন তেমনি মেলায় আসা বিদেশীরাও সানন্দে ছাতা মাথায় দিয়ে ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রায় অংশ নেন। বাংলাদেশে যখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশটি সরকারী পৃষ্ঠপোষোকতায় বিকৃত হতে বসেছে ঠিক সে সময় বাঙালীর রক্তে মিশে থাকা ঐতিহ্যকে জাপানের মাটিতে নিয়ে আসা নিয়ে কমিউনিটি নিউজের সাথে কথা হয়েছিলো শিল্পী কামরুল হাসান লিপুর। আমাদের আলোচনার পর্বটি এখানে তুলে দেওয়া হলোঃ

প্রশ্নঃ জাপানের মাটিতে প্রথমবারের মত মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজন করার কথা কি করে মাথায় এলো?

কামরুল হাসান লিপুঃ যদি শুরুটা বলতে চাই আমাদের আরেকটি মেলা আছে, সেখানেই ২০০৭ সাল থেকেই মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজন করতে চেয়েছিলাম। নানান বাধার কারণে আয়োজন সম্ভব হয়নি। অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু কাজ হয়নি।

তারপর চেষ্টা করতাম স্টেজ এর মধ্যে বা তার আশেপাশে আমাদের ফোক আর্টকে প্রমোট করতে। এতে অবশ্য সবাই সহযোগিতা করতেন। তার জন্যে সবার কাছে কৃতজ্ঞ । মঙ্গল শোভাযাত্রা করাটা আমার প্রথম থেকেই ইচ্ছা ছিল, যাইহোক অবশেষে এবার আমাদের বৈশাখী মেলা জাপান এ করতে পেরেছি এজন্য আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ।

যদি এটা ব্যক্তিগত মতামত হতে পারে আমার কাছে মনে হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা বৈশাখী মেলার সাথে অন্তরঙ্গভাবে জড়িয়ে পড়েছে। এটার ইতিহাস যদি বলি খুব বেশি পুরনো না কিন্তু তারপরও এটা আমাদের সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নানান কারনে।

প্রশ্নঃ এ রকম একটা আয়োজন করলে দেশে স্বজনরা বিপদে পড়তে পারেন - এমন আশংকা কি মনে এসেছিলো?

কামরুল হাসান লিপুঃ যদি বলি একেবারেই মনে হয়নি বিষয়টি এমন নয়। এক সময় কাজ করতে গিয়ে মনে হতো নানান আঘাতে আসতে পারে, এবারও এসেছে নানান বাধা, তারপরও সবার সহযোগিতা পেয়েছি। জাপানেই বাধা এসেছে আর বাংলাদেশে সমস্যা হবে এটাই স্বাভাবিক।

প্রশ্নঃ জাপানের ব্যস্ত জীবনের মাঝেও পুরো প্রস্তুতিতে কতটা সময় লেগেছিলো?

কামরুল হাসান লিপুঃ দীর্ঘ এক মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমে ফসল এটা।

প্রশ্নঃ সামনের দিনগুলিতেও কি এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে?

কামরুল হাসান লিপুঃ অবশ্যই আমার প্রচেষ্টা থাকবে প্রতি বছর যেন এই কাজটি করতে পারি এবং সেই জন্য প্রয়োজন সবার সহযোগিতা এবং উদার মনমানসিকতা। মঙ্গল শোভাযাত্রার সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। মঙ্গল একটি বাংলা সুন্দর শব্দ মানুষ কেন যে এটার মধ্যে ধর্ম নিয়ে আসে সেটা বুঝতে পারি না।

প্রশ্নঃ এ বছর বাংলাদেশে কথিত আনন্দ শোভাযাত্রাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

কামরুল হাসান লিপুঃ বাংলাদেশ এখন যেটা হচ্ছে সেটা মোটেও কাম্য না। আপনি চাইলে হয়তো নামটা পরিবর্তন করতে পেরেছেন কিন্তু মূল বিষয়টা কি পরিবর্তন করতে পেরেছেন? মানুষ কিন্তু নামের জন্য আসেনি, এসেছে মূল কার্যক্রমটার জন্য।

প্রশ্নঃ এই আনন্দ শোভাযাত্রা বাংলাদেশের সংস্কৃতির জন্যে কতটা ক্ষতি করতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

কামরুল হাসান লিপুঃ একই কথা বলবো, ইতিহাস একদিনে তৈরী হয় না -ইতিহাস তৈরী হতে অনেক সময় লাগে। আজ থেকে ৫০ বছর বা ১০০ বছর পর যখন বাংলার ইতিহাস লেখা হবে তখন মঙ্গল শোভাযাত্রার নামটাই আসবে আনন্দ শোভাযাত্রা নয়। এটা দিয়ে কিছু সময়ের জন্য মানুষকে ভোলানো যেতে পারে কিন্তু ইতিহাস কখনো ভুলে যায় না ইতিহাস কখনো মিথ্যা বলে না ইতিহাসে সে মূল জিনিসটাই থাকে এটা আমার বিশ্বাস এবং এটাই সত্য।

তা ছাড়া, আমি মনে করি আনন্দ শোভাযাত্রা নাম দিয়ে আমাদের সংস্কৃতিকে বিকৃত করা হচ্ছে।

প্রশ্নঃ জাপানে তো আপনি অনেক চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন, যার মধ্যে অনেকগুলিই ছিলো মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর উপর, এ প্রজন্মের একজন হয়েও আপনার এই প্রেরণার উৎস কী?

কামরুল হাসান লিপুঃ এ প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধুর একটি উক্তি মনে পড়ে "আমি মুসলিম আমি বাঙালি"। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় একটা স্লোগান ছিল 'এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ'।


আমি বাঙালি আমি বাংলাদেশী আমি যদি আমার মুক্তিযুদ্ধকে, আমার ইতিহাসকে ভুলে যাই, তাহলে তো আমি মানুষ হতে পারব না। আমি তো মনে করি বঙ্গবন্ধু কোন দলের নয় বঙ্গবন্ধু আমাদের সকলের বাংলাদেশের, বাঙালির।

প্রশ্নঃ আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

কামরুল হাসান লিপুঃ আপনারা অনেকেই জানেন জাপানে কাহাল নামে আমাদের একটি গ্যালারি হয়েছে আমরা চেষ্টা করি সবসময় বাংলা সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করতে। জাপানে বাংলা সংস্কৃতিকে পরিচিত করে দেওয়াই আমাদের সব সময়ের প্রচেষ্টা। আমি এজন বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলা সংস্কৃতিকে জাপানের বুকে এবং এখানে বেড়ে ওঠা পরের প্রজন্মের কাছে তুলে ধরাই আমাদের লক্ষ্য।

কমিউনিটি নিউজঃ এই সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্যে আমাদের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।

কামরুল হাসান লিপুঃ আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.

 

[প্রথমপাতা]