ইউনুসের জাপান সফরঃ কতটুকু "ড্যামেজ কন্ট্রোল" হলো?

কমিউনিটি রিপোর্ট ।।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস সম্প্রতি জাপান সফর করে গেছেন।
ব্যক্তিগত এই সফরটিকে ঘিরে চারিদিকে ব্যাপক আলোচনা চলছে, সেই সাথে চলছে
প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির নানা হিসাব। তার এই সফরের কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিলো।
নিক্কেই'র একটি ফোরামে অংশ নিতে দেশের অর্থে এই ব্যক্তিগত সফরের পাশাপাশি
ইতিমধ্যে শীতল হয়ে আসা জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ককে জোড়া লাগানোর একটি
প্রচেষ্টা চালিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত বছরের জুলাই-আগষ্ট এবং পরবর্তীতে গঠিত ইউনুস সরকারের উপদেষ্টাদের
বিভিন্ন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে জাপানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের দ্রুত
অবনতি ঘটে এবং জাইকা ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে অর্থায়ন বন্ধের হুমকি দিয়ে রেখেছে।
মেট্রোরেলে আগুন দেওয়ার ঘটনা, মেট্রোরেলে দুর্নীতির অভিযোগ, প্রয়োজতিরিক্ত
খরচের অভিযোগ, ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন মেরামত করতে মাত্র কয়েক লক্ষ টাকা হয়েছে
বলে উল্লেখ (যা বাস্তবে অন্য স্টেশন থেকে যন্ত্রাংশ খুলে এনে মেরামত করা
হয়েছিলো) ইত্যাদি অভিযোগের কারণে জাপানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কে
টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়।
এরপর রয়েছে মাতারবাড়ি প্রকল্প নিয়েও উপদেষ্টারা বিভিন্ন রকমের বিতর্কিত
মন্তব্য করেন।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সাথে বৈঠকে তার লক্ষ্য ছিলো চলমান
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করতে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা চাওয়া, ইপিএ
(ইকনোমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট) চুক্তি সই ইত্যাদি। ইশিবা ইপিএ চুক্তির
বিষয়ে তেমন আগ্রহ না দেখিয়ে পরবর্তীতে এ নিয়ে আরও আলোচনার কথা উল্লেখ করেন।
ইশিবা বাংলাদেশে দ্রুত গণতন্ত্রায়নের প্রয়োজনীয়তার কথা ড.ইউনুসকে স্মরণ
করিয়ে দেন।
জাপান ১.০৬৩ বিলিয়ন ডলারের একটি অর্থ সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে তবে তা
ড.ইউনুসের চাওয়া বাজেট সাহায্য নয় এই অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে ৪১৮ মিলিয়ন
ডলার পলিসি লোন যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংস্কার ও পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে,
৬৪১ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হচ্ছে জয়দেবপুর-ইশ্বরদি রেলওয়ে ডবল ট্র্যাক লাইন
উন্নয়নের জন্যে যা আগের আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই কথাবার্তা চুড়ান্ত হয়েছিলো
এবার শুধু চুক্তি সাক্ষর হয়েছে। আর ৪.২ মিলিয়ন ডলার রাখা হচ্ছে বাংলাদেশের
ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তির জন্য।
ফলে বাজেট ঘাটতি মেটাতে ইউনুস যে ৫০০ বিলিয়ন ডলার চাইতে গিয়েছিলেন তা পাননি।
জাইকার সাথে মহেশখালী-মাতারবাড়ি ইনটিগ্রেটেড ডেভেলাপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ বা
মিডি - এই প্রকল্পটি গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বহু আগে থেকেই চালু রয়েছে।
২০১৯-২০ সাল থেকে তার পুরোপুরি বাস্তবায়ন শুরু হয়ে গেছে। এই প্রকল্পের
আওতায় বড় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বন্দর ইত্যাদি নির্মাণ করা হয়েছে। গত বছর
প্রকল্পটি দেখতে গিয়ে ইউনুস সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা ফয়জুল করিম
প্রকল্পটির কথা উল্লেখ করে বলেন -এটি একটি বিলাসি প্রকল্প, বাংলাদেশে এ রকম
কোনো প্রকল্পের দরকার নেই, এতে মানুষের কোনো উন্নতি হয় না। আমরা ছোট ছোট
প্রকল্প হাতে নেবো। ফয়জুল করিম সেখানে দুর্নীতিরও অভিযোগ তোলেন। অথচ তিনি
জানতেনই না এই এই প্রকল্পে জাপানেরই বেশী আগ্রহ ছিলো।
তার এই বক্তব্য নিয়েই দু'দেশের মধ্যে আরও সম্পর্কাবতি ঘটে। এরই মধ্যে গত ৭
মে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ ঐ একই প্রকল্পের একটি অংশ নিয়ে
পুনরায় দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন।
এরপর দুদক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ উল্লেখকৃত প্রকল্পের অংশের প্রজেক্ট
ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। এই ঘটনার
পরেই জাইকা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ইআরটি'র কাছে একটি চিঠি পাঠায়। সেখানে
তারা ৭টি প্রশ্নের জবাব চায়, ৪ জুনের মধ্যে যার উত্তর না পেলে ৫০ হাজার কোটি
টাকারও বেশি এই ঋণ প্রকল্প স্থগিত করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করে অর্থাৎ মিডি
প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধের হুমকি দেয়।
জাইকার প্রশ্নগুলির মধ্যে ছিলো অভিযুক্ত প্রজেক্ট ডিরক্টরের বিরুদ্ধে যে
প্রাথমিক অভিযোগের কথা বলা হয়েছে, দুদক কি তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা করেছে
নাকি এটি শুধুমাত্র অভিযোগ, প্রজেক্ট ডিরেক্টর কোন সময় থেকে কোন সময়ে তিনি
কাজ করেছিলেন, প্রজেক্ট ডিরেক্টরের যে অবৈধ সম্পদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে
তার সাথে জাইকার লেনদেনের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা, তার বিরুদ্ধে যে
অর্থপাচারের কথা বলা হয়েছে তার সাথে জাইকার অর্থের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা,
তারা জানতে চেয়েছে- দুদক যে কথা বলেছে তার অর্থটা কী - এটা কি শুধুমাত্র
অভিযোগ নাকি মামলা, তদন্ত শেষ হয়েছে, চলমান নাকি বিচার শুরু হয়েছে, বিচার
কোন আদালতে অনুষ্ঠিত হবে, ইত্যাদি প্রশ্নের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চাওয়া হয়
জাইকার চিঠিতে।
ড. ইউনুস জাপান সফরে জাইকার প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাত করে বিষয়টির সমঝোতা
করার একটি প্রচেষ্টা চালান। ফয়জুল করিমের বক্তব্যের উল্টো অবস্থান নিয়ে
ইউনুস বলেন, তারা এখানে একটি মেগা সিটি বানাতে চান। জবাবে জাইকা
প্রেসিডেন্ট ইতিমধ্যেই ইস্যুকৃত চিঠির দ্রুত উত্তর দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে
বাংলাদেশ সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বান জানান। অর্থাৎ অর্থায়ন
বন্ধের হুমকি দূর হয়নি বলেই অনুমান করা হচ্ছে।
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা]
|