|
গুম্মা জেলার আকাগি পাহাড়ে শতাধিক প্রবাসীর আনন্দ ভ্রমন
কাজী ইনসানুল হক
কমিউনিটি রিপোর্ট ।। মে ৮, ২০১৯ ।।
'ভ্রমণ মানুষকে বিনয়ী করে তোলে। সে জানতে পারে দুনিয়ার তুলনায় সে কত
ক্ষুদ্র।' -গুস্তাৰ ফ্লুবেয়ার।
টানা দশদিনের দীর্ঘ ছূটির দুটো দিন কাটলো পাহার বেস্টিত গুন্মা জেলার আকাগি
পাহাড়ে। অফিসিয়াল নাম মাউন্ট অ্যাগি ( 赤城山 , আকাগি-ইয়ামা , (ইংরেজীতে Red
Castle)
অবস্হান , মায়েবাসী শহরেরে ফুজিমি মাচি। জাপানের গুম্মা প্রিফেকচার বিখ্যাত
Hot Spring আর 'বরফ স্কী'র জন্য। ছোট্ট শহর কুসাৎসুতেই আছে শতাধিক
অনসেন(hot spring) । পাশাপাশি তিনটি পাহাড়, আকাগি,মিয়োগি ও হারুনা Akagi -oroshi
নামে খ্যাত।
তচিগি জেলার আশিকাগা শহরে বসবাসরত রাজু-লুবনা জুটির আগ্রহে এবং অক্লান্ত
পরিশ্রমে সম্ভব হয়েছিল প্রায় চল্লিশটি পরিবারের শতাধীক সদস্যের এই পাহাড়
ভ্রমন। সবাই টোকিওর পাশ্ববর্তী জেলা তোচিগি, গুন্মা ,ইবারাকি জেলায় স্হায়ী
হিসেবে বসবাসরত প্রবাসী। বাড়তি আমরা কজন আমন্ত্রিত অতিথী।
রাজু-লুবনা দম্পতির পীড়াপীড়িতে আমাদের ক'জনকে আগের রাতেই ওদের বাসায় পৌঁছুতে
হয় এবং ওদের রাতভর আতিথেয়তার বিড়ম্বনা সহ্য করে শেষ রাতে যখন ঘুমোতে যাই
তখন কথিত 'নাসিকা গর্জনের' অভিযোগে আমাকে ড্রইংরুমে পাঠিয়ে পুরো রুমটা দখল
করে নেয় বন্ধু আসলাম হীরা। ড্রইং রুমে আমার বিছানায় জুয়েল এসে ভাগ বসায় ওর
স্ত্রী শাম্মি নাকি ওর নাকডাকার শব্দে ঘুমাতে পারছেনা তাই। পরে শুনেছি
ওপরতলার ওরা নাকি ভুমিকম্প হচ্ছে বলে ভেবেছিল।
২ মে সকাল ১১ টার মধ্যে National Akagi Youth Friendship Center এ সবার
পৌছানোর কথা থাকলেও আতি আগ্রহী কেউ কেউ সকাল নয়টায় সেখানে পৌছে যায়।আকাগি
স্টেশন থেকে প্রায় দেড় ঘন্টা গাড়ী দুরত্বে পাহাড়ের মাঝখানে এই সেন্টার।মুলত
স্কুল ছাত্রদের পরিবার ছেড়ে প্রথম যখন একাকী সহপাঠিদের সাথে নিযে শিক্ষা
সফরে যায় তাদের জন্য নির্মিত। খেলাধূলায় ব্যাস্ত বিভিন্ন গ্রুপের তরুনদের
ক্যাম্পিং সেন্টার এটি।প্রায় তিনশ জনের খাবার ,থাকার,খেলাধূলা
সহ ফাইভ স্টার হোটেলের সকল সুযোগ সুবিধা ।
পাহাড়ে ঘুড়ে এখানেই আমাদের রাত্রীযাপন।আমাদের জন্য প্রায় ত্রিশটি রুম।একেক
রুমে চার বেডে পরিবারবৃন্দ।আমি ও হীরা পেলাম বিশেষ সিংগেল রুম।রুম থেকেই
দেখা যায় পাহাড়ের অপার সৌন্দর্য্য, প্রকৃতির লাস্যলীলা।
শুরুতেই কনভেনশন সেন্টারে সমবেত হলাম।একজন এই সেন্টারের সকল সুবিধার বর্ননা
দিলেন। নিজ হাতে সব কাজ করতে হবে,নিজের বিছানা গোছানা,রুম পরিস্কার,খাবার
সংগ্রহ,খাবার শেষে গ্লাশ থাল বাটি চামুচ যথাস্হানে রাখা ইত্যাদি। হাঁটার
বিকল্প নাই তাই সবাইকে হাঁটতে হবে তাই এই ফেসিলেটিজে লিফটের সংখা কম,তাও
আবার কখনও এক ফ্লোরের বেশী নয়। লিফটে লেখা আছে "হুইল চেয়ার ও বৃদ্ধ না হলে
লিফট পরিহার করুন"।আমি দুদিনে কাউকে লিফট ব্যাবহার করতে দেখিনি ,এমনকি সফ্ট
বলের এক বৃদ্ধা শিক্ষিকাকে দেখেছি তার স্ক্রাচ দিয়ে সিড়ি পার হচ্ছেন।
আমরা সবাই মিলে আমাদের জাতীয় পতাকা নিয়ে সমবেত জাতীয় সংগীত দিয়ে দিনের সূচনা
করলাম।যার যার ঘড়ের চাবি নিয়ে রুমে গিয়ে সামান্য বিরতীর পর সবাই মিলে এলাম
দুপুরের খাবার খেতে। বিশাল খাবার ঘর,একসাথে তিনশ' জনের খাবার ব্যাবস্হা। কি
নেই সেখানে। আমাদের জন্য হালাল খাবারের বিশেষ সার্ভিস।
বিকেলে সেন্টারে সবাই মিলে ধন্যবাদ জ্ঞাপন পর্বটি ছিল বিশেষ শিক্ষনীয়।
সমবেত সবাই মিলে নিজেদের পরিচয় পর্ব বর্ননা, জাপানের জাতীয় পতাকা ও
সেন্টারের পতাকা দু'জন তরুন ছাত্র
করতালীর মধ্যে নামালেন । আমাদের দলনেতা নোমান সৈয়দ রাজু বাংলাদেশীদের পক্ষ
থেকে শুভেচ্ছা জানালেন । এরপর জন্ম মাস অনুযায়ী আমরা বারো পর্বে বিভক্ত হয়ে
পরস্পরের মধ্যে পরিচিত হলাম। আমি আমার গ্রুপে মাত্র একজন প্রবাসী বোনকে
পেয়েছিলাম।
বিকেলে আশ পাশে পাহাড়ে ঘোড়াঘুড়ি। বারবিকিউ সেন্টার ও তাবুতে রাত্রি যাপনের
ব্যবস্হাদি পরিদর্শন ও ছবি তোলার পর্ব শেষ করে আমাদের জন্য বিশাল হল রুমে
সমবেত হলাম ।সেখানে সবার আড্ডা জমজমাট। সব বাচ্চাদের পুরুস্কার দেয়া হলো।আমন্ত্রিত
শাম্মী বাবলি সম্প্রতি কোলকাতা থেকে তার নতুন রবীন্দ্র সংগীতের সিডি প্রকাশ
করার জন্য সম্বর্ধিত হলেন।কাজী ইনসানুল হক তার হাতে স্মারক সম্মাণনা দিলেন।
আয়োজকদ্বয় ও উপস্হিত সবার পক্ষ থেকেও শাম্মী পেলেন বিশেষ ফুলেল উপহার। আবেগে
আপ্লুত শাম্মী এত ভালবাসায় কাঁদো কাঁদো হয়ে গাইলেন তার রেকর্ডকৃত গানের
অংশবিশেষ। পুরুষ মেয়েরা গ্রুপ গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আড্ডা, ফটো তোলা, ক্যারাম
ও তাস নিয়ে মেতে উঠলেন।চললো চা চক্র।সাতটায় রাতের খাবার,তারপর
ক্যাম্পফায়ার। আমরা ক'জন বের হলাম রাতের পাহাড় দেখতে,অবসন্ন দেহে রুমে ফিরে
ঘুমোতে যাবো,সমন এলো ঘূম হবেনা ।পাশাপাশি দূটো চার বেডের রুম সাজানো হলো
মুখোমুখি।একদিকে মেয়েরা অন্যদিকে ছেলেরা ।আমরা তিন সেট তাসে বারোজন সংগে
সমসংখক সহযোগী।
মেয়েদের রুমে বিচিত্র কন্ঠে কারাওকে।যতদুর সম্ভব বিশ্ব ভারতী থেকে এম
মিউজিক করা শাম্মীর গান গাওয়ার সুযোগ মেলেনি ওই প্রতিভাময়ীদের সিরিয়ালে ।তারপর
ভোররাতে বিছানায়।
প্রায় শতাধিক প্রবাসীর আনন্দ ভ্রমনের দ্বিতীয় সকাল।মধ্য রাত পর্যন্ত আড্ডার
ক্লান্তিতে সবাই রিসোর্টের রুমে ঘুমের অতলে।৬ টা বাজতেই হালকা মিউজিক বাজিয়ে
জানান দিচ্ছে, উঠো, নাস্তা শেষে বেড়িয়ে পড়ো। আবার সকালের নাস্তা খেয়ে
সবাই ছুটলাম দর্শনীয় স্হান পরিদর্শনে। লেক,মন্দির কত কি।দিনের আধবেলা ঘুড়ে
আবারও সেন্টারে এলাম দুপুরের খাবার খেতে । খাওয়া শেষে আবারও আড্ডা।
পড়ন্ত বিকেলে সবার বিদায়।স্বদেশ ও স্বজন ছেড়ে ভিনদেশে জীবনের ঠিকানা গড়া
আমাদের পরিচয়—আমরা প্রবাসী। এই প্রবাসেই স্বল্পকালীন কিংবা দীর্ঘকালীন কারণে
অভিবাসী প্রক্রিয়ায় কেউ কেউ সে দেশের নাগরিক, স্থায়ী বা সাময়িক সিটিজেন।
কিন্তু মূলত আমরা স্বদেশে 'প্রবাসী', ভিনদেশে 'বিদেশি'। যাপিত জীবনে রক্ত
সম্পর্কহীন জনদের সঙ্গেই আমাদের সম্পর্ক অটুট হয়ে ওঠে।
সুখ-দুঃখ-আনন্দ-হাসিকান্নায় আমরা তাদের সঙ্গেই কাটিয়ে দিই জীবনের মূল্যবান
সময়গুলো। এমনকি মৃত্যুর পর সৎকারেও এই অনাত্মীয়রাই পাশে থাকেন। প্রবাসীর
সঙ্গে প্রবাসীর সম্পর্ক যে কতটা অটুট তা চোখে পড়ল এই বিদায় বেলায় ।
দু'টোদিন এতগুলো মানুষ একসাথে ছিলাম , যেন একই পরিবার । তাই বিদায় বেলাটায়
সবাই কিছুটা বিষন্ন হয়ে গাড়ী স্টার্ট করলেন। বিদায় আকাগি, বিদায়।
WARNING:
Any unauthorized use
or reproduction of
'Community' content is
strictly prohibited
and constitutes
copyright infringement
liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |
|