প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ  বর্তমানের কথামালা শিল্প-সাহিত্য

বাংলাদেশ কমিউনিটি

আর্কাইভ

লাইফ স্টাইল

যোগাযোগ

 

 

 

 

জাপানে “বাংলাদেশ মুসলিম কমিউনিটি” কর্তৃক মুসলিম কবরস্থান প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ

 

 

রাহমান মনি ।।

জাপান প্রবাসীদের মধ্যে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ- এর কারনে সম্মিলিত প্রচেষ্টাতে অনেক অসাধ্য সাধন সম্ভব হয়েছে ।

এখানে সবাই যার যার রাজনৈতিক মতাদর্শ ভুলে গিয়ে দেশের স্বার্থে এক টেবিলে বসেন সকলে। এখানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা অন্য রাজনৈতিক সংগঠনের অস্তিত্ব রয়েছে। স্থানীয় জাপানি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এখানে প্রত্যেকেই যার যার অবস্থান থেকে দলীয় কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। তারপরও তারা দেশের প্রয়োজনে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।

যার ফলশ্রুতিতে দেশের বাহিরে জাপানে সরকারি অর্থায়নে প্রথম স্থায়ী (টোকিও) শহীদ মিনার নির্মাণ, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বৈশাখী মেলা উদযাপন, ধর্ম-বর্ণ-দল-মত নির্বিশেষে সকলের সহযোগিতায় মহান শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস আয়োজন সম্ভব হচ্ছে।

জাপানে মুসলিম কমিউনিটির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের সংখ্যা।

অনেক গুলি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সহৃদয় আপামোর ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সক্রিয় সহযোগিতায় । বাকী রয়েছিল কেবল রয়েছিল কবরস্থান প্রতিষ্ঠা ।

মুসলিম, ইহুদি এবং খ্রিস্টানদের মাটিতে কবর দেয়ার ধর্মীয় বিধান রয়েছে। জাপানে মৃতদের সাধারণত বৈদ্যুতিক চুল্লিতে পুড়িয়ে ফেলা হয়। আর মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলার মধ্যে একমাত্র ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ঘোর নিষেষাজ্ঞা রয়েছে।

ধর্মের বিধিবিধান প্রবাসে অনেকে মেনে না চললেও ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় আশা থাকে মৃত্যুর পর এক মুঠো মাটি। অর্থাৎ কবর। বিশেষ করে দেশে অবস্থান করা পরিবার পরিজনরা চায় মৃত স্বজনদের শবদেহটি যেন স্বদেশে পাঠানো হয় অন্তত মাটি দেয়ার জন্য।

কিন্তু, প্রবাস থেকে একটি শবদেহ স্বদেশে পাঠানো ব্যয় সাপেক্ষ। মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী হলেও মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকেন না কেউ। প্রবাসে মৃত্যু কাম্য না হলেও মৃত্যু হয়। কারণ, মৃত্যু তো আর স্থান, কাল, পাত্র ভেদ বুঝে না। তাই প্রবাসেও মৃত্যু হয়ে থাকে।

জাপান থেকে একটি শবদেহ বাংলাদেশে পাঠাতে সব মিলিয়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ ইয়েন এর মতো খরচ হয়ে থাকে। মৃত্যুর পর এই পরিমাণ অর্থ অনেকের নিকটই থাকে না। আর বাংলাদেশ থেকেও সমপরিমাণ অর্থ আনানো সম্ভব নয়। তাই, সকলের সহযোগিতায় শবদেহ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়।

কিন্তু শবদেহটি যদি জাপানে দাফন করা যায় তাতে ব্যয় এক চতুর্থাংশে নেমে আসে। এতে, একদিকে অর্থ খরচ যেমন কমে আসে তেমনি মৃতদেহেরও দ্রুত দাফনকার্য সম্পন্ন হয়। আর ইসলাম ধর্মে মৃতদেহ দ্রুত দাফন করার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

এছাড়া সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশিদের অনেকেই জাপানিজ পাসপোর্ট গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশি পাসপোর্ট ত্যাগ করে। আর জাপানিজ নাগরিকদের দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ নেই। তাই জাপানি পাসপোর্ট গ্রহণকারী কোনো বাংলাদেশির মৃত্যু ঘটলে তার শবদেহ বাংলাদেশে পাঠানোর কোনো সুযোগ না থাকায় জাপানেই তার দাফন/সৎকার করতে হয়।

এই দাফন সম্পন্ন করতে বেশ কিছু ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয় ।

তাই প্রবাসীদের পক্ষ থেকে জাপানে একটি মুসলিম কবরস্থান প্রতিষ্ঠার দাবী চলে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে ।

কিন্তু জাপানে মৃতদেহ মাটি দেয়ার অনুমতি পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য এবং অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় ।

অতি সম্প্রতি প্রবাসী ব্যবসায়ী এমদাদ হোসেন এ৪র নিরলস প্রচেষ্টায় একটি সুযোগ এসে যায়।

সাইতামা কেন-এর হোনযো সিটিতে ১২৪ টি মৃতদেহ কবর দেয়া ,দাফন পূর্ব গোসল , পরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণ সম্বলিত একটি সুযোগ এসে যায় । তিনি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম নান্নু এবং বাদল চাকলাদার সহ কয়েকজনের সাথে আলাপ করেন।

তাদের পরামর্শে আরও ব্যাপক সংখ্যক প্রবাসীদের সংশ্লিষ্টতা করার লক্ষ্যে ২৫ ফেব্রুয়ারি তোশিমা সিটির ইকেবুকুরোতে নিশিইকেবুকুরো’র ইকে-বিয হলে এক জরুরী মতবিনিময় সভায় মিলিত হন ।

অর্ধশতাধিক প্রবাসী নেতৃবৃন্দ সভায় অংশ নিয়ে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন । তাদের অধিকাংশই কবরস্থান প্রতিষ্ঠার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন । কেহবা আরেকটু সময় নিয়ে আরও বিপুলসংখ্যক প্রবাসীদের সম্পৃক্ত করার কথা জানান ।

সবার মতামতের প্রতি সন্মান জানিয়ে আগামী ৫ মার্চ রোববার একই স্থানে দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মতবিনিময় সভার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ।

তাই , প্রবাসী ভাইবোনদের কাছে বিনীত অনুরোধ থাকবে , ৫ মার্চ এর উক্ত সভায় অংশ নিয়ে এই মহতী উদ্যোগের সম্পৃক্ত হয়ে নিজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দায়মুক্ত থাকার সুযোগ হাতছাড়া না করার জন্য । কারন , মৃত্যু অনিবার্য , শাশ্বত , চিরসত্য । পালানোর পথ নেই । তবে , দিনক্ষন , সময় , স্থান এর নিদিষ্টতা নেই ।।

 

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.

[প্রথমপাতা]