শ্রাবনীর কাছে খোলা চিঠি?
ডালিম হোসেন
যদি শ্রাবনী ছাড়া অন্য কেউ এটি পড়া শুরু করে থাকেন তাহলে তার কাছে করজোরে
অনুরোধ দয়া করে এই চিঠিটি যে করেই হোক ওর কাছে পৌছাবেন। একটি মানুষ
সারাজীবন আরেকটি মানুষকে ভূল বুঝে কাটিয়ে দেবে এটা কি আপনি মেনে নিতে পারেন?
এটি আসলে একটি চিঠি নয় একটি গল্প আবার গল্প না বলে সত্য ঘটনাও বলা যায়। এটি
আসলে একটি প্রেমের করুন বিচ্ছেদের আদিপান্ত। এধরণের কাহিনী নিয়ে সিনেমা বা
গল্প বাজারে অনেক রয়েছে কিন্তু সত্যিই কারো জীবনে ঘটতে পারে সেটা কল্পনাও
করা যায় না। যাই হোক শুরু করি। এই গল্পের মূল চরিত্র ডালিম এবং শ্রাবনী। ইলা
ডালিমের ফুপাত বোন এবং সে ডালিমকে ভালবাসে অন্যদিকে ডালিম ভালবাসে শ্রাবনীকে।
আরেকটি চরিত্র আছে নিতু সে ডালিমের স্ত্রী। শাহেদ নামের একটি ভিলেন্ও এই
গল্পে আছে। আসুন তাহলে শুরু করি-
ডালিম এবং ইলা ফুপাত মামাত ভাই বোন। ইলা ডালিমের থেকে বেশ জুনিয়র (প্রায় ৫
বত্সর) বলতে গেলে ইলাকে কোলে পিঠে করে বড় করেছে ডালিম। একি শহরে বাসা থাকায়
তাদের যোগাযোগ ছিল খুব বেশী। ডালিম ইলাদের বাসায় অহরহ যাওয়া আসা করত। ইলা
বেশ স্মার্ট মেয়ে গান করে সুন্দর চেহারা কিন্তু এদিকে ডালিম হেংলা, পাতলা,
কালো, একটু ধর্মিক ধরণের ছেলে। ভয়ঙ্কর কথা হলো তার মুখে দাড়িও আছে। কিন্তু
এই স্মার্ট মেয়ে ইলা প্রেমে পড়ে যায় ডালিমের। ডালিম প্রথমে ব্যাপারটা আচ
করতে পারে নি কারণ ইলার মতো একটি স্মার্ট মেয়ে এই মদনের প্রেমে পড়বে ভাবাই
যায় না। আর তাছাড়া ডালিম ইলাকে কখনো অন্য রকমভাবে কল্পনাই করতে পারে না।
ছোট বেলা থেকেই নিজের ছোট বোনের মত্ই দেখে আসছে। তবুও ডালিম যখন কিছুটা আচ
করতে পারল তখন সে শ্রাবনী নামের একটি মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে । তখন
থেকেই সে ইচ্ছাকৃত ভাবে ইলাদের বাসার সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেয়। ডালিম একটু
হাবাগোবা টাইপের হওয়াতে ব্যাপারগুলি একদম্ই কম বুঝত। এই যেমন সে শ্রাবনীর
প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে সেটা কিন্তু নিতান্তই এক তরফা। ডালিম কিন্তু
শ্রাবনীর প্রতি এই দুর্বলতার কথা ইলার কাছে গোপন করে নি। বরং বাড়িয়ে বলত যে
শ্রাবনীর সঙ্গে তার প্রেম হয়েই গেছে। শ্রাবনীর সঙ্গে ডালিমের পরিচয়ের
বৃত্তান্ত বলি- শ্রাবনী ডালিমের বোনদের সঙ্গে একি হোষ্টেলে থাকত। বোনেরা
শ্রাবনীর অনেক প্রশংসা করত যে মেয়েটি অনেক ভাল, লক্ষী, নামাজী, দেখতেও
সুন্দর ইত্যাদী ইত্যাদী। এরকম একটি মেয়েই ভাইয়ের ব্উ হবার উপযুক্ত। তো
বোনদের কাছে গল্প শুনেই ডালিম না দেখেই এই মেয়েটির প্রেমে পড়ে যায়। একদিন
সে হলে গিয়েছে বোনদের সঙ্গে দেখা করতে। কল দেবার পরেও অনেক্ষন যাবত যখন কেউ
আসছে না তখন মামারা একটি মেয়েকে দেখিয়ে বলল ঐ মেয়েটি একি হলে থাকে মেয়েটিকে
দেখেই ডালিমের বুকের মধ্যে ধ্বক করে উঠল, মনে হলো এটিই শ্রাবনী। সত্যিই সে
শ্রাবনী ছিল। সে তার কাছে জানতে পারল বোনেরা নেই। সে আর কথা না বাড়িয়ে চলে
এলো। মেয়েটিকে দেখার পর ডালিমের দুর্বলতা মনে পাকাপাকি স্থান করে নিল।
দ্বিতীয় সাক্ষাত ডালিমের জন্মদিনে। সে বোনদের নিয়ে ও বন্ধুদের নিয়ে একটি
চাইনিজে পার্টি থ্রো করল। সেই জন্মদিনটিই হয়ত ডালিমের জীবনের স্বরনীয় এবং
সর্বশ্রেষ্ঠ জন্মদিন ছিল। কারণ সেদিন ওর বোনদের সাথে উপস্থিত ছিল শ্রাবনী
নামের মেয়েটিও। বলে রাখা ভাল যে শ্রাবনীর বড় বোন্ও সেখানে ছিল। এবার ডালিম
একটু সাহস করে বন্ধুদের দিয়ে মেয়েটিকে একটু বাজিয়ে দেখতে চাইল। বন্ধুরা
মেয়েটিকে বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিল যে ওকে কেউ একজন পছন্দ করে। কিন্তু
শ্রবনী খুবি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বন্ধুদের এসব কথাকে উড়িয়ে দিল। এর পরের
তৃতীয় সাক্ষাত: ডালিম মেসে শুয়ে জ্বরে কাপছে সম্ভবত ১০৩ ডিগ্রী জ্বর। এই
সময়ে তার মেসে এসে উপস্থিত হলো তার বোন সঙ্গে শ্রাবনী। না ডালিমকে দেখার
উদ্দেশ্যে নয় এসেছে শ্রাবনীর বড় বোনের বিয়ের ব্যাপারে একটি ছেলের খোজ খবর
করতে। কারণ ডালিম এবং তার হবু দুলাভাই একি ফিল্ডের মানুষ। শ্রাবনীকে দেখে
ডালিমের জ্বর উধাও হয়ে গেল সে সঙ্গে সঙ্গে ছুটল ছেলের খোজ নিতে। খোজ নিয়ে
শ্রাবনীকে জানালো। শ্রাবনীও তাকে ধন্যবাদ দিয়ে শিক কাবাব খাওয়ালো। যাই হোক
বোনদের মাধ্যমে জানতে পারল শ্রবনীর বোনের বিয়ে সব ঠিকঠাক কার্ড্ও বিলিকরা
শেষ। হঠাত করে জানা গেল শ্রাবনীর বোনের বিয়ে ওখানে হয় নি কারণ বোনের নিজস্ব
পছন্দ ছিল এবং অবশেষে সেখানেই বিয়ে হয়েছে। শ্রাবনীর সঙ্গে পরিচয় হবার পর
এভাবেই প্রায় ১ বত্সর পার হয়ে গিয়েছে। ডালিম তার বোনদের মাধ্যমে শ্রাবনীকে
ম্যাসেজ দেবার চেষ্টা করে বোনদের বান্ধবীদের মাধ্যমে চেষ্টা করে যায়। কোন
ভাবেই কোন সুবিধা না করতে পেরে সে একটি সাহসী পদক্ষেপ নেয়- যা থাকে কপালে
নিজেই প্রপোজ করতে চায় এবং চলে যায় ইডেনের হলে যেদিন ওর বোনেরা সবাই হলে
ছেড়ে দেশে চলে গিয়েছে। ডালিম সরাসরি শ্রাবনীকে প্রপোজ করে। কিন্তু শ্রাবনী
তাকে বলে যে তার পরিবারে তার বোন যে কান্ড করেছে তারপর সে আর কোন সম্পর্কে
জড়াতে চায় না কিন্তু ডালিমের চাপাচাপিতে সে অন্য একটি ছেলেকে পছন্দ করার কথা
জানায় যার নাম শ্রভ্র কাজেই ডালিমের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্ন্ই আসে না।
ডালিমের হয়ত সেই দিনটি ছিল সবচেয়ে হতাশার দিন। সে তারপর আর শ্রাবনীকে
কোনভাবেই চাপাচাপি করেনি। কারণ ডালিম যে কারো, যে কোন সম্পর্ককে সাংঘাতিক
শ্রদ্ধা করে। বরং ডালিম মনে করে যে শুভ্রর যদি কোন সাহায্য দরকার হয় ডালিম
সেটা তাকে করবে। কিন্তু তবুও ডালিম শ্রবনীকে ভুলতে পারে না। সে মনযোগ দেয়
পড়ালিখায়। শ্রাবনীর পর অন্য কোন মেয়েকে ডালিমের ভাললাগার প্রশ্ন্ই আসে না।
এরকম একটি সময়েই ডালিম বুঝতে পারে ইলার দুর্বলতার কথা কিন্তু তবুও সে ইলাকে
এড়িয়ে যায়। এরপর কেটে যায় আরো ২ বত্সর ডালিমের পড়ালিখা শেষ রেজাল্ট হবার
অপেক্ষায় এরমধ্যে সে একটি চাকরিও ম্যানেজ করে নেয়। হঠাত একদিন সে শ্রাবনীর
ফোন পায়। শ্রবনী তাকে কোন এক চাইনিজ রেস্টুরেন্টে আসতে বলে। ডালিমের বুক
ছলাত করে উঠে। সে এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ঠিক সময় মতোই পৌছে যায় বুক ধ্বক
ধ্বকনি নিয়ে। তার চাপা সন্দেহ সত্যিই কি শ্রাবনী আসবে তার সঙ্গে দেখা করবে?
ডালিমের সেদিনের আচরণ যদি ভিডিও করে রাখা যেত তাহলে হয়ত সেটাই হতো পৃথিবীর
সর্বশ্রেষ্ট কমেডি ভিডিওক্লিপ। শ্রাবনী ওর এক বন্ধবীকে নিয়ে এলো, খাবার
অর্ডার দিল কিন্তু একি ডালিম কাপছে। ঠক ঠক করে কাপছে। সর্বভুক ভোজন রসিক
ডালিম, যার গলা থেকে একেবারে নীচ পর্যন্ত পেট, সেই ডালিম একটা কিছু খেতে
পারছে না। বন্ধুটি তাকে অনেক সাহস দেবার চেষ্টা করেছে ডালিমের একটি হাত্ও
চেপে ধরেছিল কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। ডালিম কাপছে তো কাপছেই। যাই হোক
অবশেষে তেমন কোন কথা ছাড়াই খাওয়া শেষ হলো। শ্রাবনীই প্রস্তাব দিল কোন পার্কে
যাবার। ওরা চলে গেল শিশু পার্কে। না শ্রাবনী এবং ডালিম এক রিক্সায় করে নয়।
শিশুপার্কে গিয়ে ডালিম যেন একটু হাফ ছেড়ে বাচল। বলা বাহুল্য শ্রাবনীও অনেক
স্মার্ট মেয়ে সে ডালিমের সঙ্গে কথা বলার জন্য টিকিট কাটার নাম করে উঠিয়ে
নিয়ে গেল। এবার ডালিম একটু সাহস ফিরে পেয়ে শ্রাবনীর সঙ্গে আসল কথা শুরু করল।
শ্রাবনীর একি কথা তার পরিবারে যে ঘটনা ঘটে গিয়েছে তার বাবা যে আঘাত পেয়েছেন
তারপর আর পরিবারের অমতে বিয়ে করার প্রশ্ন্ই উঠে না। মদন ডালিম্ও একমত হলো
যে, সে তথাকথিত প্রেমে বিশ্বাসী নয়, সে শ্রাবনীর সঙ্গে দেখা করতে চায় না বা
কথাও না বলতে চাইলেও আপত্তি নেই। তবে সে ১ বত্সরের মধ্যে প্রতিষ্ঠা অর্জন
করার চেষ্টা করবে এবং যে ভাবেই হোক পারিবারিকভাবেই বিয়ে করবে। তার তথাকথিত
প্রেম করার ইচ্ছা নেই, সে শ্রাবনীকে সরাসরি বিয়ে করবে। যাই হোক এর পরেও
শ্রাবনীর সঙ্গে ডালিমের নিয়মিত টেলিফোনে যোগাযোগ শুরু হয়। এটাও মদন ডালিম
বড় অদ্ভুত ভাবে শুরু করে। সেই ঘটনার রাতেই শ্রাবনী ডালিমকে একাধিক বার কল
দেয় কিন্তু সে সেদিন ঘুমিয়েছিল তার দুলাভাই এর সঙ্গে তাই ইচ্ছা থাকা সত্বেও
শ্রবনীকে কল দেয় না পরের দিন কল দিয়ে শুকনা গলায় দুএকটা কথা বলে শুরু করে
তাদের টেলিপ্রেম। শ্রাবনীর কোন মোবাইল ছিল না। তার বন্ধবীর মোবাইল দিয়েই
এগিয়ে যায় তাদের প্রেম পর্ব। কিন্তু তাদের টেলিপ্রেমটাও বড় অদ্ভূত ছিল। ১০
মিনিট কথা হলে, ৮ মিনিট্ই দুজন বলার কিছু খুজে পেত না, আবার কথা হলেও দেখা
যেত একি কথা বার বার বলছে। এর পর শুরু হয় ডালিমের অন্য এক ধরণের জীবন। সে
ভাল চাকরীর চেষ্টা করে বিদেশে স্কলারশিপের জন্য চেষ্টা করতে থাকে। তার
সময়সীমা ১ বত্সর। এদিকে শ্রাবনীর সঙ্গে টেলিফোনে তার নিয়মিত যোগাযোগ থাকেই।
শ্রাবনীর পরীক্ষার সময় একটা গ্যাপ সৃষ্টি হলেও শ্রাবনী দেশে চলে যাবার পর
আবার সেটা শুরু হয়। শ্রাবনীর বড়ি ছিল বাংলাদেশের একেবারে শেষ প্রান্তে।
শ্রাবনী হয়ত ডালিমকে বুঝতে পারে যে এই মদনকে বেশী লাই দেয়া যাবে না তাই হয়ত
সবসময় নিয়ন্ত্রিত কথাবার্তাই বলত কিন্তু টেলিফোনে ডালিমের আর বাধ মানে না
মনে যা আসে তাই বলে যায়। ডালিমের সারাদিন সারা সপ্তাহ কাজের পর যদি একবার
একটু শ্রাবনীর সাথে কথা বলতে পারে তার সমস্ত ক্লান্তি মুছে যায়। ডালিমের
ভালবাসার ধরণটা হয়ত আলাদা ছিল কিন্তু তার ভালবাসায় এতটুকু খাদ কখনো ছিল না।
এর মধ্যে ডালিম তার বন্ধুর দুলাভাইয়ের মধ্যমে শ্রাবনীর বাসায় তার অবিভাবকের
মতামত পাবার চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু সেটা খুব বেশীদূর এগোয় না ডালিম্ও
শ্রাবনীকে চাপ দিতে থাকে ফ্যামিলিকে ম্যানেজ করার কিন্তু শ্রাবনীর একি কথা
পরিবার থেকে তাকে কিছু না বললে সে কিছু করতে রাজী নয়। আবার এদিকে ডালিমের
বাসায় তার বাবা জানতে পারে যে ছেলে নাকি তার মতামতের তোয়াক্কা না করে এখনি
কাকে নাকি বিয়ে করতে চায়। এব্যাপারে ডালিমের সঙ্গে তার কথা হয়। এবং ডালিম্ও
তাদের সত্যি ঘটনা জানিয়ে দেয় যে হ্যা সে শ্রাবনীকে পছন্দ করে এবং ওকেই বিয়ে
করবে এবং সেটা মোটেই পরিবারের মতামতকে অগ্রহ্য করে নয় এবং এখনি নয়। সে ১
বত্সর সময় নিয়েছে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। এমনকি ডালিমের সঙ্গের
শ্রবনীর টেলি সম্পর্কের কথাও অকপটে বাবাকে বলে দেয়। ডালিমের বাবা পরে তার
বোনদের কাছ থেকে তথ্য ও শ্রাবনীর ছবি দেখে তাকে পছন্দ করে এবং ডালিমের
সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। শ্রাবনীদের পরিবারিক অবস্থা হয়ত ডালিমদের মতো এত
ভাল ছিল না কিন্তু একেবারে খারাপ্ও ছিল নয় কিন্তু শ্রাবনীর একাডেমিক যোগ্যতা,
আচরণ এবং লুকিং হয়ত ডালিমের বাবার কাছেও ভাললাগে তাই সে আর ডালিমকে বাধা
দেয় না।
যাই হোক এর মধ্যে হঠাত করে একটা বোমা ফাটে। ডালিম মনোবসু স্কলারশিপের জন্য
মনোনীত হয় এবং তার সমানে সময় মাত্র ৩ মাস। ডালিম সিদ্ধান্ত নেয় যে, সে এখনি
শ্রাবনীকে বিয়ে করে সাথে করে জাপানে নিয়ে যাবে। সে সেই কথাটা বাবা মার কাছে
প্রকাশ করার আগেই তার বাবা শ্রাবনীর সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব শ্রাবনীদের বাসায়
পাঠায়। শ্রবনীর বাবার ইন্টারেষ্ট তখন পর্যন্ত্ও অস্পষ্ট। তার ফোন দেবার কথা
থাকলেও দেয় না। ডালিমের বাবাই ফোন করে যোগাযোগ করে কথা বলে ডালিমের বায়োডাটা
পাঠায়। এর মাঝে হঠাত করে একদিন ডালিমের অফিসে দেশ থেকে তার এক বন্ধু শাহেদ
আসে। শাহেদ ডালিমকে জানায় যে সে একটি মোবাইল সেট কিনতে চায়। এখানে বলে রাখা
ভাল শাহেদের স্ত্রী এবং ডালিমের মামাত বোন ইলা ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। শাহেদ আসার
কিছুক্ষন পরেই ডালিম শ্রাবনীর বোনের হাজবেন্ডের কাছ থেকে একটি ফোনকল পায়।
ডালিম কিন্তু শ্রবনী এবং তার বড় বোন ছাড়া ওদের পরিবারের আর কাউকে চিনে না।
শ্রাবনীর বোনের স্বামী রতন তাকে তখনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলাভবনের সামনে
দেখা করার অনুরোধ জানায়। ডালিম বিপুল উত্সাহ উদ্দীপনায় তার বন্ধু শাহেদকে
নিয়ে যায় রতন সাহেবের সঙ্গে দেখা করাতে। ডালিম তার সঙ্গে রাস্তায় বসে চা
খায় এবং সবকিছু বর্ণনা করে। রতন সাহেব তাকে জিজ্ঞেস করে মনোবসু স্কলারশিপ
কি, শ্রাবনীকে বিয়ে করলে কবে নাগাদ জাপানে নিয়ে যেতে পারবে ইত্যাদী ইত্যাদী।
ডালিম কিন্তু একটু বিরক্ত হয় করণ যে বিষয়ে সমস্ত তথ্য সে ডাক যোগে একবার
শ্রবনীর বাসায় পাঠিয়েছে সেই বিষয়ে আবার কেন প্রশ্ন করা হচ্ছে? তারপর ডালিম
অফার করে ভাল কোন হোটেলে একসঙ্গে লাঞ্চ করবার। কিন্তু রতন সাহেব সময়
স্বল্পতার কথা বলে এড়িয়ে যান এবং তারা নিলক্ষেতের কোন এক হোটেলে শুধু
ড্রিংকস করে বের হয়ে আসে। বলা বাহুল্য অনেক জোড়াজুরি সত্বেও শাহেদ্ই বিলটা
পরিশোধ করে। যাই হোক রতন সাহবে বলে যে, সে ডালিমের সঙ্গে কথা বলে খুব খুশি
এবং সে এখনি তার শশুর বড়িতে ব্যাপারটা জানাতে চায়। এবং এও বলে যে তার কথার
উপড়েই শ্রাবনীর পরিবার সমস্ত সিদ্ধান্ত নেবে। তারপর শাহেদ রতন সাহেবকে
প্রস্তাব দেয় তখনি ফোন করতে। ডালিমের কাছ থেকে ফোনকার্ড নিয়ে রতন সাহেব
ডালিমের সামনেই শ্রাবনীদের বাসায় ফোন করে এবং ডালিমকে জানায় যে তারা ঠিক
তিন দিন পরে ডালিমদের বাসায় অফিসিয়ালি সব জানাবে। ডালিম যার পর নাই খুশী।
তার স্বপ্ন আজ স্বার্থক হতে চলেছে। যে শ্রাবনীকে দীর্ঘ ৫ বত্সর নিজের করে
পাবে বলে প্রতিক্ষায় দিন কাটিয়েছে সেই স্বপ্ন এখন সার্থকের আঙ্গিনায়। শাহেদ
তার ব্যাক্তিগত ব্যাবসার কাজের কথা বলে ১ ঘন্টার জন্য বাইরে গিয়ে আবার ফিরে
এসে ডালিমের সঙ্গে যায় মোবাইল সেট কিনতে। সেদিন শাহেদ যে সেটটি কিনেছিল তার
দাম ছিল ২৫০০০টাকা। ডালিম কল্পনাও করতে পারছিল না যে এত দামী একটা সেট
শাহেদ কিনবে। কিন্তু সে সেটা নিয়ে বেশী চিন্তা করেনি কারণ এটা শাহেদের
ব্যাক্তিগত ব্যাপার আর তখন ডালিমের মনে শ্রাবনী ছাড়া আর কোন চিন্তার ঠাইও
ছিল না। যেহেতু ব্যাপারটি অফিসিয়ালি সেটেল হয়েই গেল তাই আর ডালিম শ্রাবনীকে
ফোন দিচ্ছিল না তাছাড়া শ্রাবনীর তো আর তখন মোবাইল ছিল না তাই বাসায় ল্যান্ড
ফোনে কল দিলে কে কি মনে করবে এই ভেবেও সে দ্বিধার মধ্যে ছিল। এদিকে ডালিমের
বাবা তার সমস্ত বোন ও দুলাভাইদের ঐ নির্দিষ্ট দিনে বাসায় আসতে বললেন কারণ
সেদিন্ই হয়ত সমস্ত পাকাপাকি কথা হবে। কবে ফ্যামিলি থেকে মেয়ে দেখতে যাবে কবে
বিয়ের দিন ঠিক করবে ইত্যাদী নিয়ে সিদ্ধান্তের ব্যাপারে পরিবারের সবার
মতামতের প্রয়োজনীয়তা তো আছে। এদিকে ডালিম তো মহানন্দে বাসায় অপেক্ষা করছে।
সময় গড়িয়ে যায় দুপুর হয়, বিকাল হয়, রাত হয়ে যায় কিন্তু শ্রাবনীদের বাসা থেকে
কোন ফোন আসে না। ডালিম পরিবারের সবাইকে নিয়ে পরের দিন্ও অপেক্ষা করে কিন্তু
সেই ফোন আর আসে না ডালিমের বাবা একবার তাকে জিজ্ঞেস করে যে, সেই ফোন করবে
কিনা কিন্তু অভিমানী ডালিম সেই বিষয়ে বেকে বসে। সে জানিয়ে দেয় যে তাদের বাসা
থেকে কোন ধরণের ফোন শ্রাবনীদের বাসায় করা হবে না। যে পরিবারের মানুষ ডালিমকে
তার পরিবারকে এত হেয় করতে পারে তাদের সাথে কোন আত্নীয়তা করার প্রশ্ন্ই আসে
না। ডালিম এমনিতেই রতন সাহেবের কিছু প্রশ্ন শুনে বিরক্ত ছিল তারপর শ্রাবনীও
কোন পদক্ষেপ না নেয়াতে একটু নাখোশ্ও ছিল, মনোবসু বৃত্তি পাওয়াতে তার একটু
অহঙ্কারবোধ্ও যে কাজ করছিল না তা নয়। তার একটাই প্রশ্ন এত কিছুর পর্ও কেন
শ্রাবনীদের বাসা থেকে তাকে এতো অবহেলা করা হবে। ফোন এল না তো এলোই না।
ডালিম্ও আর শ্রাবনীকে ফোন দিল না। কারণ সে পরিবারের কাছে যারপরনাই হেয় হয়েছে
তাই যার কারণে ছোট হয়েছে তার সাথে আর কোন ধরণের যোগাযোগ করবে না বলে
মনস্থির করে। একটি ভালবাসার মৃত্যু হয়ে গেল। যে ভালবাসা পরিণতির খুব
কাছাকাছি ছিল সেই ভালবাসার এধরণের অপমৃত্যু আর কোনদিন না হোক এটাই কাম্য।
ডালিম স্তব্ধ হয়ে গেল। এদিকে বন্ধুরা বোঝাতে থাকল একটি মেয়ে গিয়েছে তো কি
হয়েছে আরো কত মেয়ে আছে একটি দেখে বিয়ে করে ফেল। ডালিম্ও শ্রাবনীর কাছে
অপমানিত হয়ে, রাগে দুক্খে অন্য যায়গায় বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। এবং পরিবারকে
জানায় যেখানেই বিয়ে দেয়া হোক তার কোন ধরণের আপত্তি নেই। উদয় হয় নতুন একটি
মেয়ের যার নাম নিতু। ডালিমের মা অনেকদিন আগে কোন এক সময় নিতুকে দেখেছিল।
তার ভাললেগেছিল। সে নিতুদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। নিতুদের বাসা থেকে
প্রস্তাব গৃহীত হয়। সময় না থাকায় মাত্র ৫দিন পরেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ডালিম মেয়েটিকে দেখতে যায় এবং তারো খারাপ লাগে না। আসলে শ্রাবনী ছাড়া তার
কাছে সমস্ত মেয়েই সমান। যাকেই দেখাত ডালিম আপত্তি করত না। ঠিক হয় ৩ তারিখ
আংটি পরানো ৪ তারিখ গায়ে হলুদ ৫ তারিখ বিয়ে। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু ৪
তারিখ রাতে ডালিমের গায়ে হলুদ দেবার জন্য নিতুদের বাসা থেকে লোকজন আসলে
ডালিমের পরিবার থেকে ডালিমকে জানানো হয় হলুদ না মাখতে।
ডালিম ধর্মের দোহাই দিয়ে তার অনিচ্ছার কথা জানায়। এদিকে ঘটতে থাকে
প্রলঙ্কারী সব ঘটনা ডালিমের বাসায় ফোনের পর ফোন আসতে থাকে যে নিতুর সাথে
অন্য একটি ছেলের সম্পর্ক আছে এবং নিতুর অমতে জোর করে বিয়ে দেয়া হচ্ছে।
ডালিম আবারো হতাশ হয়। ডালিমের বোন নিতুর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে যে হ্যা
তার সম্পর্ক ছিল কিন্তু সে যখন গায়ে হলুদ মেখে পিড়িতে বসেছে তখন আর তার অমত
নেই। কিন্তু ডালিম এবং তার পরিবার সিদ্ধান্ত নিতে পারে নি কি করবে। কারণ
ডালিম বিদেশ যাবার পর অন্তত ১-২ মাস মেয়েকে দেশেই থাকতে হবে। পরে অনেক
আলোচনা করে বিয়ে বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বলা বাহুল্য ডালিমের অনেক
আত্নীয় স্বজন তখন চলে এসেছে। বিয়ের সমস্ত কেনাকাটা ফরমালিটিস্ও শেষ। শুধু
বিয়ে পড়ানো বাকী। ডালিমের আরেকটি লজ্জাবনত এবং ঘুমহীন রাত কেটে যায়।
ইতিমধ্যে বন্ধু রতন এবং ডালিমের আরেক ফুপাতো বোনের স্বামী প্রস্তাব করে
ডালিমের বিয়ে না ভেঙ্গে ইলার সঙ্গে দেবার। ডালিমের বাবা কিছুটা রাজী থাকলেও
ডালিম এবং তার মার বিরোধীতায় সেটা বাতিল হয়ে যায়। এদিকে নিতুদের বাড়ী থেকে
রতনের মাধ্যমে হুমকি আসে যে তারা ডালিমের ক্ষতি করবে। তবুও আবারো নিতুদের
বাড়ীর লোকজন এবং ডালিমের বাড়ীর লোকজনের সঙ্গে কথা হয় এবং শান্তিপূর্ণভাবে
বিয়ে বাতিল হয়ে যায়। নাটক মনে হয় তাই না? কিন্তু ঘটনা সত্যি। ডালিম ইতিমধ্যে
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে সে আর বিয়ে করবে না। জীবনে কখনোই নয়। সে তার ঢাকার
বাকী বন্ধুদের আসতে বারণ করে দেয়। যে সমস্ত আত্নীয় স্বজন আসার কথাছিল তাদের
বারণ করে দেয়। একটি নির্ঘুম রাত কাটিয়ে সকালে পরিবারের সবাই নামাজ পড়ে
কোরআন পড়ে কথা বলছিল হঠাত ডালিমের বড় বোন কাদতে কাদতে বলে বসে ডালিম একটি
মেয়ের উপড় আমরা জুলুম করছি না তো তুই কি একবার নিতুর সঙ্গে কথা বলবি? ডালিম
কনফিউজড হয়ে পড়ে। ঢাকার যে বন্ধুরা এসেছিল তারাও ব্যাপারটাতে সাপোর্ট করে।
ডালিম তক্ষুনি একটি খুবি সাধারণ পোষাক পড়ে হাতে একটি কোরআন শরীফ নিয়ে তার
এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ভোর ৭ টায় চলে যায় নিতুদের বাসায়। সে নিতুর কাছে
জানতে চায় সবকিছু। নিতু অবলীলায় সবকিছু স্বীকার করে আবারো বলে যে যেহেতু সে
আংটি পরেছে কাজেই বিয়েতে এখন তার আর কোন আপত্তি নেই সে শুধু ক্ষমা চাইবার
জন্য্ই তার পূর্ব প্রেমিকের কাছে ফোন দিয়েছিল এবং তার পরের কোন ঘটনার সঙ্গে
সে সম্পৃক্ত নয়। ডালিম তাকে প্রশ্ন করে যে সে কি পবিত্র। নিতু কোর্আন হাতে
নিয়ে স্বীকার করে যে সে পবিত্র। এরপর ডালিমের আর বিয়েতে আপত্তি থাকে না।
ডালিমের বাবা তখনি কাজী ডেকে ছেলের ব্উ হিসেবে ঘড়ে তুলে নেয় নিতুকে। ডালিম
সুখী হয় নিতুকে পেয়ে। নিতু তার স্বর্বস্ব দিয়ে ডালিমকে নতুন করে ভালবাসে।
ডালিম ভুলে যায় শ্রাবনীকে। আর ইলার ব্যাপারে সে একটু কানাঘুষা শুনতে পায় যে
ডালিমের বিয়ের আগের রাতে ইলারা নাকি এসেছিল। যে করেই হোক ডালিম-নিতুর বিয়ে
থামিয়ে দিয়ে ইলার সাথে বিয়ে দেবার বন্দবস্ত করতে। এমনকি ডালিম নিতুর সঙ্গে
যে সকালে কথা বলতে গিয়েছিল তখনো নাকি ইলা এবং নিতুর প্রেমিকদের পক্ষের
মাস্তানেরা নিতুদের বাড়ী ঘিরে ফেলেছিল। তাদের ইচ্ছা ছিল ডালিম কোন ভাবে এই
বাসা থেকে বের হলেই তার উপড় আক্রমন করা হবে। যাই হোক এবিষয়গুলিকে ডালিম আর
মোটেই গুরুত্ব দেয় না। ডালিমের জীবন ভরে উঠে সুখে। ডালিম জাপানে যাবার ২মাস
পরে নিয়ে যায় নিতুকে তার ১ বত্সর পরেই ঘর আলো করে একটি ছেলে হয়। শ্রাবনীর
প্রতি একবুক অভিমান নিয়ে ডালিম এবং নিতু এখনো সুখী। মাঝে মাঝে শ্রাবনীর কথা
ডালিমের মনে হয় না তা নয়। তখনি সে বুকে তুলে নেয় তার একমাত্র সন্তানকে,
নিতুকে। আবারো ভুলে যায় শ্রাবনীর কথা। শুধু একটি কথাই তার মনে হয় কেন
শ্রাবনী এমন করল?
এভাবেই চলছিল ডালিমের সুখের সংসার হঠাত একদিন গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়
ডালিমের হঠাত মনেপড়ে শ্রাবনীর কথা হঠাত আবারো মনে আসে একি প্রশ্ন শ্রাবনী
কেন এমন করল? এসব ভাবতে ভাবতে হঠাত তার মনে হয় আচ্ছা রতন সাহেব কি আসলেই
শ্রাবনীর দুলাভাই ছিল। এমনো তো হতে পারে সে ছিল ইলার একজন ভাড়াকরা অভিনেতা।
ডালিমের সামনে থেকে এক এক করে সমস্ত জট খুলতে থাকে। মনে পড়ে ইলা একদিন
বলেছিল সে দেখে নেবে ডালিম কি করে শ্রাবনীকে বিয়ে করে। মনে পড়ে যায় রতন
সাহেব আর বন্ধু শাহেদের একি দিনে ডালিমের কাছে উপস্থিত হবার ঘটনা। মনে পড়ে
যায় একদিন শাহেদের স্ত্রী বলেছিল কেন আপনি আমার বন্ধবী ইলাকে কষ্ট দিচ্ছেন?
ও এসে কত কান্নাকাটি করে গেল। মনে পড়ে যায় শাহেদের ১ ঘন্টার জন্য উধাও হয়ে
যাওয়া। মনে পড়ে যায় শাহেদের কল্পনাতীত দামে মোবাইল কেনা। মনে পড়ে যায় রতন
সাহেবের অদ্ভুত আচরণের কথা। মনে পড়ে যায় ডালিম ও শাহেদের সামনেই রতন
সাহেবের শশুরবড়ী ফোন করা ও তাতক্ষনিক সিদ্ধান্ত জানানোর ঘটনার কথা। ডালিমের
ছোখ ফেটে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। একি করেছে সে! শ্রাবনীর প্রতি এত বড় একটা
অবিচার সে করে ফেলল? এখন ডালিম নিশ্চিত যে শ্রাবনীদের বাসায়্ও হয়ত এরকম কোন
অভিভাবককে দিয়ে জানানো হয়েছিল যে ডালিমদের বাসা থেকে পাকা কথা বলার জন্য
কেউ ফোন করবে বা তাদের বাড়ীতে যাবে। শ্রাবনীদের বাসার সবাইও হয়ত ডালিমদের
মতোই কোন প্রতিক্ষার সময় পার করেছে। শ্রাবনীও হয়ত ডালিমের মতো অভিমান করে
কোন একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। গভীর রাতে ডালিমের বুক হাহাকার করে উঠে
এ কি ভূল করল সে জীবনে? দীর্ঘ ৫ বত্সর সে শুধু শ্রাবনীকেই দোষী করেছে? আসল
কিন্তুর কারণ খোজার চেষ্টা সে করেনি? এখন তার মনে একটাই প্রশ্ন কেন সে
অন্তত একবার শ্রাবনীর কাছে জানতে চায়নি এই ঘটনার কারণ কি? কেন সে নিজের
দম্ভকে গুরুত্ব দিয়ে একটা মেয়েকে এত বড় দুক্খ দিল? ছি ছি ছি। আরো দু ফোটা
চোখের জল গড়িয়ে পড়ে। ডালিম বুকে তুলে নেয় তার ঘুমন্ত সন্তানকে। কিছুক্ষন
আদর করে সন্তানকে মাঝখান থেকে পাশে সরিয়ে রেখে জরিয়ে ধরে নিতুকে। অস্ফুষ্ট
স্বরে বলে উঠে এরি নাম কি নিয়তি? এখন সে কাকে ভালবাসবে? কাকে ঘৃণা করবে?
ইলাকেও সে ঘৃণা করতে পারে না করণ হয়ত ডালিমের প্রতি ইলার প্রেমটাও ছিল অন্ধ।
কিন্তু প্রাণের বন্ধু শাহেদ? সেই শেষ পর্যন্ত এতবড় একটা বেঈমানী করল?
বন্ধুত্বের থেকে, বন্ধুর প্রেমের থেকে, ইলার প্রেম্ই তার কাছে বড় ছিল? একটি
দামী মোবাইল সেটের গুরুত্ব বন্ধুত্বের কাছে কিছুই না? ডালিম চিত্কার করে
প্রেমিক প্রেমিকাদের বলতে চায় “তোমরা নিজেদের জেদ, নিজেদের আত্ম অহমিকাকে
গুরুত্ব দিতে গিয়ে ভালবাসাকে অপমান করো না। নিজেদের প্রতি বিশ্বাস রাখ,
বিশ্বাস হারিও না। যে কোন ধরণের ভুলবোঝাবুঝি হলে অন্তত পক্ষে একবার জানতে
চেও কেন এধরণের একটি ভুলবোঝাবুঝি হল”।
বন্ধু শাহেদকে বলছি: তুই একটি মোবাইলের জন্য আমার সাথে এতবড় বিশ্বাসঘাতকতা
করতে পারলি? তোকে আমি এখন লক্ষটাকার মোবাইল কিনে দেবার সামর্থ রাখি আয় নিয়ে
যা সেই মোবাইল ফিরিয়ে দে আমর শ্রাবনীকে আমার কাছে। তুই কি জানতি না আমি ওকে
কত ভালবাসতাম?
ইলাকে বলছি: একটি ভালবাসাকে গলাটিপে হত্যা করে তুমি কি পেলে? তুমি কি তোমার
ভালবাসার মানুষকে অর্জন করতে পেরেছিলে? তুমি যে আমাকে ভালবাসতে সেটা একবার
মুখফুটে পর্যন্ত বলার সাহস্ তোমার ছিল না। তাহলে কেন আমার জীবন থেকে
শ্রাবনীকে কেড়ে নিলে?
শ্রাবনীকে বলছি: তুমি যেখানেই থাক সুখে থেক। যদি সম্ভব হয় ক্ষমা করে দিও এই
কাপুরুষকে। তোমার ভাগ্য অনেক ভাল এই ধরণের একটি কাপুরুষের সঙ্গে তোমার বাকী
জীবন পার করতে হচ্ছে না। তুমি কোন একজন সুপুরুষকে বেছে নিয়ে চিরসুখী থেকো।
ভুলে যেও আমাকে।
নিতুকে বলছি: নিতু তুমি আমাকে ভুল বুঝো না। তুমি কখনো ভেবোনা আমি তোমাকে
অবহেলা করব। তুমি আমার সন্তানের মা। শ্রাবনী ছিল আমার জীবনের একমাত্র
ভালবাসা তাই হয়ত ভুলতে পারি না কিন্তু তুমি আমার স্ত্রী তোমাকেও আমি অনেক
ভালবাসি অনেক।
চোখভর্তি গরম জল নিয়ে এখানেই শেষ করছি।
dalim_76@yahoo.com
|