|
ওকিনাওয়ার যুদ্ধ -৪: ছবি দিয়ে যুদ্ধের ইতিহাস হস্তান্তর
কমিউনিটি রিপোর্ট ।। জুন ৩০, ২০১৫ ।।
(সতর্কতাঃ এই কাহিনীতে মর্মস্পর্শী ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।
অনেক পাঠকের কাছে তা মানসিক অস্থিরতার কারণ হতে পারে)
বলা হয়ে থাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে (প্যাসিফিক
থিয়েটার) ওকিনাওয়ার যুদ্ধ ছিলো সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী। ৮০ দিনের এই যুদ্ধে
১২০,০০০ সাধারণ মানুষ প্রাণ হারান তার সাথে আরো রয়েছে প্রায় লাখ খানেক
সামরিক সদস্য।
ওকিনাওয়ার অনেক সাধারণ মানুষকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিয়োগ দেয়া
হয়। যারা এই ভয়াবহ যুদ্ধে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন তারা তাদের অভিজ্ঞতার কথা
পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন, বলছেন শান্তির কতটা প্রয়োজন। এদের
মধ্যে কেউ কেউ যুদ্ধের ময়দানে যে সব হত্যাযজ্ঞ চলেছে তার কিছু ফুটেজও
সংগ্রহ করেছেন।
তাদের অনেকেরই আজ অনেক বয়স হয়ে গেছে কিন্তু তা সত্বেও কাজ করে যাচ্ছেন
পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ইতিহাসের সঠিক চিত্রটা তুলে ধরতে।
মার্কিন সেনাবাহিনী ৭০ বছর আগে এসব ধ্বংসযজ্ঞের ছবি ধারণ করেছিলো। যুদ্ধে
বেঁচে যাওয়া এক মার্কিন সেনা ওকিনাওয়া যুদ্ধকে বলেছেন "সমস্ত নরক যেন গড়িয়ে
গিয়ে একটি নরকে পরিণত হয়েছে"।
স্থানীয় একটি গ্রুপ মার্কিন ন্যাশনাল আর্কাইভ থেকে অর্থের বিনিময়ে এসব
ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। তারা প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার ফিট ফিল্ম সংগ্রহ করেছেন,
সময়ে যার দৈর্ঘ্য ৫০ ঘন্টার মতো।
গ্রুপটি শিশুদের কাছে তুলে ধরছেন যুদ্ধে আসলে কী হয়েছিলো তা বোঝাতে। তবে
গ্রুপটি দু'বছর আগে তাদের রণে ভঙ্গ দেয়। কারণ তাদের বেশির ভাগেরই এতো বয়স
হয়ে গেছে যে তারা আর তা অব্যহত রাখতে পারছেন না।
গ্রুপের সদস্য কিনোকো ইশিহারা এখনো বিভিন্ন স্কুল গুলোতে গিয়ে ফুটেজ গুলো
শিশুদের সামনে তুলে ধরছেন। যুদ্ধের সময় ইশিহারার বয়স ছিলো ৭ বছর। "মানুষের
মুখাবয়বের উপর যুদ্ধক্ষেত্রের যে অন্তর্বেদনা এবং দুঃখের ছাপ পড়েছিলো তা
বিস্তৃতভাবে বলার ভাষা নেই" তিনি বলেন "আমার মনে হয় সেখানেই ফুটেজের শক্তি,
তার স্বার্থকতা"।
যুদ্ধে ইশিহারা তার ৬ সদস্যের পরিবারের সকলকেই হারান, তার পিতামাতা, তিন
ভাইবোন সকলেই মারা যান। এর থেকে তিনি এক ধরনের দায়িত্ব অনুভব করেন। তার
পরিবারের কোনো সদস্যের একটি ছবিও তার কাছে নেই। যখন ঝড়ের মতো বোমা পড়ছিলো
তার মা, ৯ বছরের ভাই এবং আর দুই ছোট বোন সবাই ছুটে পালাচ্ছিলেন। ইশিহারা
তার মা ও ভাইকে রক্তের সাগরে ভাসমান স্তুপাকারে পড়ে থাকা লাশের মধ্যে খুঁজে
পান।
"আমার মায়ের নাড়িভুঁড়ি শরীর থেকে বের হয়ে পড়ে তা ঝুলে পড়ছিলো, ভাইয়েরও
তাই। দৃশ্যটা দেখে আমার বিশ্বাসই হয়নি, কারণ আমরা সকলেই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম
জীবনে-মরনে সকলে একসাথে থাকবো। আমি তাদের ডাকলাম মা ওঠো, ভাই ওঠো! তারা
একটুও নড়লো না। আমি তাদের ঝাঁকি দিলাম। তারপর যখন ভালো করে দেখলাম তাদের
-তাদের শরীর একেবারে হিম শীতল" তিনি বললেন।
ইশিহারা বলেন তিনি মনে করেন যে সব মানুষেরা এরকম যন্ত্রনার মধ্যে ভুগে
মরেছে তার কর্তব্য সে সব অভিজ্ঞতার কথা মানুষকে বলে যাওয়া।
ফুটেজ গুলো ওকিনাওয়া প্রিফেকচারাল আর্কাইভে দান করা হয়েছে। গত বছর সেগুলোকে
ডিজিটালে পরিবর্তন করা হয়। যে কেউ বিনামূল্যে তা দেখতে ও কপি করতে পারবেন।
এই ফুটেজ দেখে একজন দর্শকের মন্তব্য "সাধারণ মানুষরাই যুদ্ধের সবচেয়ে বড়
শিকার ছিলো, এই ফিল্ম দেখে আমার সে ধারণাই বদ্ধমূল হয়েছে।"
"আমার মনে হয় অতীতে কী হয়েছিলো তা সকলেরই জানা উচিত। কেবলমাত্র তাহলেই
শান্তির পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব" অপর এক দর্শক বললেন।
ইশিহারা আশা করেন এই ফিল্ম ওকিনাওয়ার যুদ্ধের কথা সকল মানুষের কাছে তুলে
ধরবে এমনকি যেদিন তিনি থাকবেন না সেদিনও, বিশ্বের মানুষ মর্মভেদী অভিজ্ঞতার
কথা জানবে। এনএইচকে।
WARNING:
Any unauthorized use
or reproduction of
'Community' content is
strictly prohibited
and constitutes
copyright infringement
liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |
|